পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

377 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড মাইকেল :ঃ আমিও ভুলিনি নারায়ণদা আমার বোনের হাহাকার। আমি এখনও শুনতে পাই আমার বোন মেরীর- তার বান্ধবী রাবেয়া, মরিয়ম, লক্ষ্মীর চীৎকার। তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বার বার বলেছেঃ প্রতিশোধ চাই, প্রতিশোধ চাই। আমরা মরে যাচ্ছি-তোমরা বেঁচে থাকবে, প্রতিশোধ নেবে। প্রতিশোধ (নেপথ্যে মহিলাদের চীৎকার ও সংলাপ ক্ষীণভাবে ভেসে আসবে) শান্তি ঃ সত্যিই কি আমরা বেঁচে আছি মাইকেল? সত্যিই কি আমরা তাদের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছি? সত্যিই কি আমরা বৃদ্ধ বাবার আদেশ আমি পালন করতে সক্ষম হয়েছি? আমাদের আমার বাবা বাধা দিতে চাইলেন, বেয়োনেট দিয়ে তারা হত্যা করলো তাঁকে। আমরা ঝোপের আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখলাম বাবার বুক দিয়ে গল গল করে রক্তের নদী নামছে। বাবা বলতেন কাউকে ঘৃণা করতে নেই, কারুর প্রতি হিংসা করতে নেই। কিন্তু, কিন্তু যে মানুষ নয়, যে পশুরও অধম, যে মানুষেরই শত্রু তাকেও কি ঘৃণা করবো না? (নেপথে-মার ঢালো বাঙালীকা) রহমান ঃ তুমি আমি ঘৃণা না করার কে? যারা গুলি খেয়ে মরেছে, যে নারী লাঞ্ছিতা হয়েছে, যে শিশু আগুনে পুড়ে মরেছে তাকে জিজ্ঞেস করো ঘৃণা করা উচিত কিনা। যে মানুষ, তার বিরুদ্ধে তো আমাদের কোন যুদ্ধ নেই-কিন্তু যে অমানুষ, যে মানুষের শক্রতাকে আমরা ধ্বংস করবোই। শান্তি ঃ ঠিকই বলেছ রহমান ভাই। আচ্ছা রহমান ভাই, চট্টগ্রামে আমরা যে দুভাগ্যের মুখে পড়েছিলাম তাতো বললাম, কিন্তু তুমি তো কিছুই বললে না তোমার কথা। রহমান ?ঃ আজ আমাদের ব্যক্তিগত কোন সংবাদ তো নেই শান্তি। আমাদের জিজ্ঞাস্য একটিঃ বাংলাদেশ কেমন আছে। আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের একমাত্র নাম হচ্ছে বাংলাদেশ। আর সে জন্যেই তোমরা সবাই নিজেদের কথা বলোনি, বলোনি কি দুঃখের পাহাড় বুকের মধ্যে প্রতিদিন বহন করছো। নারায়ণ ঃ বলিনি এই জন্যে যে, বলার সময় নেই আমাদের। চূড়ান্ত জয় না হওয়া পর্যন্ত সময় নেই আমাদের। তবু আজ এই মুহুর্তে সেইসব বেদনার কথা আমাদের মনে পড়ে গেল যা স্মরণে এলে হৃদয় চূর্ণ হয়ে যায়। তাই জানতে বড় ইচ্ছা আমাদের তোমার কথা, তোমার ব্যক্তিগত কথা। রহমান ঃ (করুণ কষ্ঠে) কমরেড, তোমরা আমার জীবনের মরণের বন্ধু। তোমাদের বলতে আমার বাধা নেই। কুষ্টিয়ায় ছিলাম আমরা। এই হতভাগ্য আমি বাদে আমাদের আর সবাই হারিয়ে গেছে অনন্তে। তাদের হাত-পা বেঁধে আমাদেরই ঘরে পুড়ে আগুন লাগিয়ে দেয় নরপশুরা। (নেপথ্যে ক্ষীণ শব্দঃ বাঁচাও-বাঁচাও) সবাই :ঃ আহা! (দূর থেকে ক্ষীণ মার্চের শব্দ ভেসে আসবে) রহমান ঃঃ ঐ শোন, মুক্তিবাহিনী এগিয়ে আসছে। বন্ধুগণ, প্রত্যেক জাতির জীবনে একটি রচম সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসে। তখন তাকে স্বাধীনতা ও পরাধীনতা, মুক্ত আকাশ ও বদ্ধঘর- এর যে