পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

504 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বলছিলাম ঢাকা বেতারের কথা। কিভাবে সেখানে ন্যায়কে, সত্যকে হত্যা করা হচ্ছে সেই প্রসঙ্গে আসছি। দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় মতামত- শক্র কবলিত ঢাকা বেতারের একটি নিত্যকার অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে কি সত্যি কথা প্রচার করা হয়? এর উত্তর জানতে হলে পত্রিকা অফিসের কথা জানা প্রয়োজন। বর্বর জঙ্গীশাহী বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় বিষয় টেলিফোনে জানিয়ে দেন। এবং সেইসব বিষয়ের উপর সম্পাদকীয় লেখা হয়ে থাকে। এরপর লিখিত বক্তব্য ছাপাবার আগে সামরিক কর্তৃপক্ষ পুনরায় সেটা অনুমোদন করেন। পত্রিকার সমস্ত সংবাদ ঠিক একই নিয়মে ছাপা হয়-শুধুমাত্র তারিখ, পত্রিকার নাম এবং সম্পাদকের নাম ছাড়া। বিবেকহীন নির্মম বেয়নেট সত্যকে লংঘন করে যে পত্রিকার জন্ম দেয় তাদের আর যা-ই থাক বিন্দুমাত্র সত্যের প্রয়াস থাকে না। তাই দৈনিক পত্রিকার মতামত একটি জাল অনুষ্ঠান। ঢাকা বেতারে এ ধরনের অনেক জালিয়াতি চলছে। ২৫শে মার্চের পরও আমি ঢাকা বেতারে কিছুদিন কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। অনুষ্ঠান ঘোষক হিসেবে ছিলাম পরে ও-বি সেকশনে লোক না থাকায় সেই সেকশনে আমাকে দেয়া হ’ল। ও-বি অর্থাৎ আউটসাইড ব্রডকাষ্ট সম্পর্কে বলার আগে পত্রবিতান’ অনুষ্ঠানটির কথা না বলে পারছি না। ২৫শে মার্চের পর প্রথম যেদিন পত্রবিতান প্রচার করা হ’ল তার দুদিন আগে এই অনুষ্ঠানটির স্ক্রীপ্ট লেখা এবং পড়বার জন্য একটা নির্দেশ পেলাম। সেই সঙ্গে আমাকে কয়েকটা চিঠি দেয়া হ’ল। পত্রবিতান অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের চিঠিপত্রের জবাব দেয়া হয়। সেই চিঠিগুলোর তারিখ দেখে অবাক হয়ে গেলাম, চিঠিগুলো ১৯৭০ সালের। আরও অবাক হলাম চিঠিগুলোর উপরে লেখা রিপ্লাই’ অর্থাৎ ৭০-এর কোন এক সন্ধ্যায় এই চিঠিগুলোর জবাব দেয়া হয়েছে। এর পরের ঘটনা আরও মারাত্মক। দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার পত্রবিতান অনুষ্ঠান-এর পালা এলো। কিন্তু কর্তৃপক্ষও একটু চিন্তায় পড়লেন, শেষ চেষ্টা হিসেবে আমাকে পুরোনো কিছু চিঠি খোঁজ করতে বললেন। দোতলার একটা অফিসরুমে গিয়ে দেখলাম আলমারির পাশে মেঝেতে অসংখ্য চিঠি পড়ে আছে। এত চিঠি? একটু অবাক হবারই কথা। চিঠিগুলো ১৯৭১ সালেরই, কিন্তু ২৫শে মার্চের আগের কথা। একটার পর একটা চিঠি পড়তে লাগলাম। প্রত্যেকটা চিঠির বক্তব্য প্রায় একই ধরনের। এক সময় ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামকে পূর্ণভাবে সমর্থন করে যেসব অনুষ্ঠান, সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল তারই প্রশংসায় ভরপুর। একটা চিঠির এক জায়গায় পড়লাম বাংলার মানুষের বক্তব্যকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার করার জন্য ধন্যবাদ- অনুষ্ঠানগুলি শুনিলে এত আনন্দ লাগে যে, আমার মায়ের মৃত্যুশোকও আমি ভুলিয়া যাইতে পারিব।” প্রতিটি চিঠিই অনুষ্ঠান সম্পর্কিত বক্তব্য ছাড়াও কুটিল ভুট্টো ও প্রধান কসাই ইয়াহিয়ার কঠোর সমালোচনায় ভরা ছিল। দোতলার সেই কক্ষে যখন চিঠিগুলো পড়ছিলাম পাশের কোন রুম-এর স্পীকার থেকে পাকিস্তানী খবরএর বিচ্ছিন্নতাবাদী দুষ্কৃতকারী, দেশের প্রধান শত্রু শেখ মুজিব এইসব শব্দ ভেসে আসছিল, আমি তখন যে “এয়ারপোর্ট-এ ইয়াহিয়া খান আসলে তাকে তো বাচ্চা ছেলের দ্বারা মালা দিয়ে স্বাগত জানান হয়, তাই না? জানেন আমাকে যদি তাকে মালা দেয়ার জন্য নেয়া হত তাহলে লুকিয়ে একটা পিস্তল নিয়ে যেতাম আর মালার বদলে তাকে গুলি করে মারতাম।” এইসব চিঠি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে দেখালাম। কিন্তু এ দিয়ে তো আর পত্রবিতান’ অনুষ্ঠান চলে না। জনৈক কর্তব্যক্তি নির্দেশ দিলেন কিছু মিথ্যে ঠিকানা দিয়ে সমস্ত স্ক্রীপ্ট লিখতে। ক্ষমা করবেন, আমি লজ্জিত। সেই নির্দেশ মত স্ক্রীপ্ট লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং তা যথারীতি সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় প্রচার করেছিলাম। তারিখটা আমার স্মরণ নাই। ২৫শে মার্চের পর মে মাসে দ্বিতীয় যেদিন পত্রবিতান অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় সেই দিনের কথা বলছি। ঐ দিনের চিঠির সত্যতা সম্পর্কে যে কোন শ্রোতা শত্রকবলিত ঢাকা বেতার কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। সেই দিনের পত্রবিতান অনুষ্ঠানে যেসব শ্রোতার চিঠির উত্তর দেয়া হয়েছে তাদের সেই