পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

518 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড সংগঠিতভাবে না হলেও সেদিনই সন্ধ্যায় আরেকদল কর্মী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ বলে পরিচয় দিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন। ২৭শে মার্চ এই কেন্দ্র থেকে মেজর (বর্তমান লেঃ কর্নেল) জিয়াউর রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এই কেন্দ্র থেকেই ২৮শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঢাকায় টিক্কা খানকে হত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়। সত্য না হলেও জনগণের হৃদয়ে আশা ও উদ্দীপনা সঞ্চারের জন্য বেতার কর্মীরা সুপরিকল্পিতভাবে এ কাজ সেদিন করেছিলেন। দুই ভাগে বিচ্ছিন্নভাবে এজন্য প্রচেষ্টা চলেছিল। প্রথম দিনে দুপুরে সামান্যক্ষণ অনুষ্ঠান প্রচারকালে গণপরিষদ সদস্য জনাব এম, এ, হান্নান হানাদারদের রুখে দাঁড়াবার আহবান জানিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। আর চট্টগ্রাম কাষ্টম বিভাগের জনাব আবদুল হালিম, একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জনাব এম, এ, মাসেম প্রমুখ। সেদিন সন্ধ্যায় দ্বিতীয় অনুষ্ঠান প্রচারের সাথে জড়িত বেতার কর্মিগণ ৩০শে মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে এই প্রচার চালু রেখেছিলেন। সেসব বেতার কর্মীর অনেকেই শেষ পর্যন্ত মুজিবনগর থেকে প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছেন। আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ডাঃ সৈয়দ আনোয়ার আলীর বাসভবনে জমায়েত হয়েছিলেন দেশপ্রেমিক কয়েকজন ব্যক্তি। নেপথ্যে শুরু হয়েছিল অপর প্রচেষ্টা। ওয়াপদার ইঞ্জিনিয়ার জনাব আসিকুল ইসলামের গাড়ীতে (চট্টগ্রাম ট-৯৬১৫) সেদিন ডাঃ আনোয়ার আলী, জনাব ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ চন্দ্র দাস, চট্টগ্রাম বেতারের ঘোষিকা কাজী হোসনে আরা সবাই ছুটে গিয়েছিলেন আগ্রাবাদস্থ ব্রডকাষ্টিং হাউসে। আরেকদিক থেকে চট্টগ্রাম বেতারের কমী জনাব বেলাল মোহাম্মদ, জনাব আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, জনাব মাহবুব হাসান একই প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রডকাস্টিং হাউসে পৌছেন। সমবেত প্রচেষ্টার ফল ফলে সেদিন সন্ধ্যায়। সেই কর্মীদের দল আবার একত্রে কালুরঘাট পৌঁছেন। খবর পেয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন টেকনিশিয়ান ও প্রোগ্রাম প্রডিউসার কয়েকজন। রাত সাড়ে সাতটার দিকে ট্রান্সমিশন কেন্দ্রের একটি কক্ষকে ষ্টুডিও হিসাবে ব্যবহার করে জনাব আবুল কাসেম সন্দ্বীপের কণ্ঠে ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুক্তির নবতম হাতিয়ারের ব্যবহার। প্রথমেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা করে টেলিগ্রামের বাংলা ও ইংরেজী তর্জমা প্রচার করা হয়েছিল। ইংরেজী থেকে তর্জমা করেছিলেন ডঃ মঞ্জলা আনোয়ার। ইংরেজীতে ঘোষণাটি পড়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার জনাব আশিকুল ইসলাম। এই ঘোষণায় বাঙালী জাতি উদ্বুদ্ধ হয়নি শুধু- বাঙ্গালী জাতি যে স্বাধীন হবেই সে আশায় উদ্দীপ্ত হয়েছিল। আধ ঘণ্টার মত প্রচারকালে আওয়ামী লীগ নেতা জনাব হান্নান ও বয়োবৃদ্ধ কবি আবদুস সালাম কথিকা পাঠ করেছেন। সেদিনের ঘোষণায় কণ্ঠ দিয়েছেন কাজী হোসনে আরা। ৩০শে মার্চ পর্যন্ত বেতার কর্মীরা অনিয়মিত হলেও অনুষ্ঠান প্রচার করেছেন। ৩০শে মার্চ হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে প্রথম বিমান হামলা চালায়। আর তা ছিল কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে। স্যাবর বিমান থেকে রকেট নিক্ষেপ করে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল ইথারের ভাষা।