পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
১১৮

 কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান পকেট লীগ নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কর্মপন্থা অনুসরণ না করিয়া তাঁদের নিজেদের কায়েমী স্বার্থ এবং প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য লীগের মর্যাদা ও জনপ্রিয়তা ভাঙ্গাইয়া চলিয়াছেন। এই উদ্দেশ্যেই তাহারা মুসলিম লীগকে দলবিশেষের প্রতিষ্ঠান করিয়া ফেলিয়াছেন। শুধু তাহাই নয়, মানবের প্রতি আশীর্বাদস্বরূপ ইসলামকেও ব্যক্তি, দল ও শ্রেণীবিশেষের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যায় এবং অসাধুভাবে কাজে লাগান হইতেছে। কোনও পাকিস্তান প্রেমিক এমন কি মুসলিম লীগের ঝানু কর্মিগণ পর্যন্ত নীতি ও কর্মসূচী সম্পর্কে কোনরূপ প্রশ্ন উত্থাপন করিতে অথবা প্রস্তাব করিতে পারে না। কেহ যদি এইরূপ করিবার চেষ্টা করে তাহা হইলে তাহাদিগকে পাকিস্তানের শত্রু বলিয়া আখ্যায়িত করা হয়।

 পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন মনে করে যে, মুসলিম লীগকে এইসব স্বার্থান্বেষী মুষ্টিমেয় লোকদের পকেট হইতে বাহির করিয়া সত্যিকার জনগণের মুসলিম লীগ হিসাবে গড়িয়া তুলিতে হইলে, মুসলিম লীগকে সত্যিকার শক্তিশালী মুসলিম লীগ বা মুসলিম জামাত বা মুসলিম জাতীয় প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চে পরিণত করিতে হইলে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমকে ইহার সদস্য শ্রেণীভুক্ত করিতে হইবে, অন্যথায় মুসলিম লীগকে পাশ্চাত্য সভ্যতা, গণতন্ত্র ও সাংগঠনিক নীতি প্রভাবান্বিত দলবিশেষের পার্টি বলিয়া ঘোষণা করিয়া অপরাপর সবাইকে সাধ্যমত দল গঠন করিবার সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দিতে হইবে। মুসলিম লীগের ভিতর প্রত্যেক ব্যক্তি, দল ও উপদলের স্বাধীন মতামত, আদেশ, নীতি ও কর্মসূচী ব্যক্ত এবং তার পিছনে সংঘবদ্ধ হইবার অধিকার দিতে হইবে। তদুপরি ছাত্র, যুবক, মহিলা, চাষী, ক্ষেতমজুর, মজদুর প্রভৃতি শ্রেণীসংঘ গড়িয়া তুলিবার স্বাধীনতা থাকিবে।

 ইসলামী রাষ্ট্রের রূপ সম্পর্কে তাতে বলা হয়ঃ

১। পাকিস্তান খেলাফৎ অথবা ইউনিয়ন অব পাকিস্তান রিপাবলিক্স বৃটিশ কমনওয়েলথের বাহিরে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্র হইবে।

২। পাকিস্তানের ইউনিটগুলিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার দিতে হইবে।

৩। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর প্রতিভূ হিসাবে জনগণের উপর ন্যস্ত থাকিবে।

৪। গঠনতন্ত্র হইবে নীতিতে ইসলামী, গণতান্ত্রিক ও আকারে রিপাবলিকান।

 কৃষি পুনর্গঠন প্রস্তাবে বলা হয়ঃ

১। জমিদারী প্রথা ও জমির উপর অন্যান্য কায়েমী স্বার্থ বিনা খেসারতে উচ্ছেদ করিতে হইবে।

২। সমস্ত কর্ষিত ও কৃষি উপযোগী অকর্ষিত জমি কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিতে হইবে।

৩। তাড়াতাড়ি অর্ডিন্যান্স জারী করিয়া তেভাগা দাবী মানিয়া লইতে হইবে।

৪। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে সমবায় ও যৌথ কৃষি প্রথা প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।...

৫। নিম্নলিখিত বিষয়ে কৃষকদের অবিলম্বে সাহায্য করিতে হইবেঃ

(ক) সেচ ব্যবস্থা সুবিধা ও সার প্রস্তুতের পরিকল্পনা।

(খ) উন্নত ধরনের বীজ ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।

(গ) সহজ ঋণদান ও কৃষিঋণ হইতে মুক্তি।

(ঘ) ভূমি-করের উচ্ছেদ না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভূমিকর শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কমানো।

(ঙ) ভূমি-করের পরিবর্তে কৃষি আয়কর বসানো।

(চ) খাদ্যশস্য প্রভৃতি জাতীয় ফসলের সর্বনিম্ন ও সর্ব-উ দর নির্ধারণ করিয়া দিতে হইবে এবং পাটের সর্বনিম্ন দর বাঁধিয়া দিতে হইবে।