পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৩৭৭

কায়েদে আজমের এন্তেকালের পর বৃটিশ সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট স্যার নজিমুদ্দীন যখন পাকিস্তানের বড়লাট নিযুক্ত হন, তখন হইতেই পাকিস্তানের হৃদয়মূলে প্রথম আঘাত হানা শুরু হয়। তিনি আজাদীর জন্য কোন ত্যাগ স্বীকার করেন নাই, অথচ আজাদীর পর তিনি কায়েদে আজমের শূন্য আসন দখল করিলেন। পাকিস্তানের এই নয়া খলিফার মাসিক বেতন ১২,৫০০ টাকা নির্ধারিত হইল। বার্ষিক ভাতা হিসাবে তিনি ৫০,০০০ টাকা এবং সরকারী ব্যায়ে সজ্জিত ২০০০ টাকা মাসিক ভাড়ার বিরাট প্রসাদ বিনা খরচে ভোগ করিতে লাগিল। তাহার সফরের ব্যয় রাষ্ট্রকেই বহন করিতে হইত এবং তাঁহার নিজস্ব বিমান চালনার ব্যয় প্রতি মাইল১০০ টাকা। তাঁহার পোষাকের ব্যয় হিসাব বার্ষিক ৩,০০০ টাকা সরকার হইতে দেওয়া হইত। অর্থাৎ তাঁহার সকল ব্যয় রাষ্ট্র হইতে বহন করিয়াছিল এবং বৎসরে তাঁহার আড়াই লক্ষ টাকা সঞ্চিত হয়।

 কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতন এবং বার্ষিক ৩ হাজার টাকা পোষাকের খরচ হিসাবে গ্রহণ করেন। তাঁহার বাড়ী, গাড়ী, বিমান, ট্রেন ও তৈজসপত্র, ভৃত্য, সব খরচই সরকার হইতে বহন করা হয়। কেন্দ্রের অন্যান্য মন্ত্রীগণও সকলে এই সুযোগ পাইয়া থাকেন।

 প্রাদেশিক প্রধান মন্ত্রীগণ-পূর্ববঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর বেতন- ১,৮০০ টাকা

ভাতা ১,২০০ টাকা

 বাড়ী, গাড়ী এবং চাকর-বাকরের ব্যয় সরকারী কোষাগার হইতে বহন করা হয়। তিনি ৬ বৎসর ওজারতী করিয়া ঢাকা ও ময়মনসিংহে কয়েকখানা প্রাসাদ নির্ম্মান করিয়াছেন। এক এক খানি প্রাসাদেও নির্মাণ ব্যয় ৩ লক্ষ টাকা। এখানে উল্লেখযোগ্য যে লীগ শাহীর পূর্বে তিনি ময়মনসিংহের একজন সামান্য উকিল ছিলেন।

 প্রদেশের অন্যান্য মন্ত্রীদেও মাসিক বেতন ১,৫০০ টাকা। ইহাদিগকে সুসজ্জিত প্রাসাদ এবং গাড়ীর ভাতা দেওয়া হয়। বিশেষ করিয়া পূর্ববঙ্গে কয়েকজন ব্যাধিগ্রস্ত ও অকর্মণ্য মন্ত্রীকে অনর্থক বসাইয়া বেতন দেওয়া হয়। এইসব ব্যাধিগ্রস্ত অপদার্থ মন্ত্রী বাহাদুররা মাসের পর মাস সরকারী খরচে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকিয়াছেন। মন্ত্রীদেও স্বাস্থ্য ভাল করিতেই সরকারী তহবিলের বিরাট অংশ ব্যয়িত হইত। অবশ্য এই সব বেতন ও খরচপত্রাদি মজলুম দেশবাসী বহন করিয়া থাকে।

বিদেশের দূতাবাসের মদের প্লাবন

 বিদেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসাবে এক শ্রেণীর লোকদিগকে পাঠানো হইয়া থাকে, ইহাদেরও অনেকে বিদেশে পাকিস্তানের ইজ্জতের এবং ইসলামের সুনামে কলঙ্ক লেপন করিতেছেন। দূতাবাসসমূহে মদেও জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাহাতে একটি প্রদেশের কোন এক বিভাগীয় ব্যয় সম্পন্ন হইতে পারে।

 খেলাফত যুগের রাষ্ট্রনায়কদের বেতন এবং অন্যান্য ব্যয়ের সহিত নয়া ইসলামী রাষ্ট্র- পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়কদের ব্যয় ও বেতনের এই তুলনামূলক হিসাব দেখিলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতে যে ইহারা ইসলামকে বরবাদ করার জন্যই যেন ঘন ঘন ইসলামী জিগির তুলিতেছে।

 পাকিস্তানের সহিত অন্যান্য অমুসলমান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের তুলনামূলক আয়-ব্যয়ের হিসাব নিম্নে প্রদত্ত হইলঃ

চীন

 চীনা গণ-সরকার প্রধানমন্ত্রী মাও সে তুং ও অন্যান্য খরচ বাবদ মাসিক ৫০০ টাকা ও অন্যান্য মন্ত্রীরা মাসিক ২০০ টাকা পাইয়া থাকেন। ইহাদের গাড়ী, বাড়ীর খরচ নিজেদেরই বহন করিতে হয়।

ভারত

 বৃটিশ আমলে বড়লাটের বেতন ছিল মাসিক ২৫,০০০ টাকা।