পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৩৮৪

বিদেশে গাঁজা বিক্রয় বন্ধ হইয়াছে এবং চাষীরা অনাহারে মরিতেছে। সরকারেরও এই বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা বার্ষিক লোকসান যাইতেছে। এইরূপে মুসলিম লীগ সরকারের ক্রমবর্ধমান খরচা পোষাইবার জন্য দেশবাসী একটির পর একটি নূতন করভোরে জর্জরিত হইতেছে।

বিচার বিক্রয়

 ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লীগের চাঁইরা যখন চীৎকার করিতেছেন, তখন ইসলামী নিয়মে বিচারব্যবস্থা কায়েম না করিয়া বিচার বিক্রয় শুরু করিয়াছেন। ইসলামী হুকুমতে আসামী ও ফরিয়াদী কাজীর দরবারে হাজির হইলে বিনাব্যয়ে সুবিচার পাইত। কিন্তু আমাদের বর্ত্তমান সরকার কাজীর বিচার প্রবর্ত্তন তো দূরের কথা, কোর্ট ফীর হার শতকরা ৫০ টাকা হিসাবে বাড়াইয়া দিয়াছেন। ইহার ফলে গরীবের পক্ষে অত্যাচারিত হইয়াও বিচার পাওয়া আশা নাই।

মুখের ভাষা কাড়িয়া লওয়ার ষড়যন্ত্র

 সারা পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জন্য অধিবাসীর মুখের ভাষা বাংলা। মুসলিম লীগের জালেমরা এই ভাষাটুকুও কাড়িয়া লওয়ার ষড়যন্ত্র করিয়াছিল। গোপনে গোপনে তারা আরবী ও উর্দ্দু ভাষা চালাইবার জন্য চেষ্টা করিয়াছিল। আরবী ও উর্দ্দু ভাষার প্রতি পূর্ব্ব-পাকিস্তানীদের কোন বিদ্বেষ নাই এবং ছিল না। তথাপি কেন এই গোপন ষড়যন্ত্র? ইহার উদ্দেশ্য ছিল কেবলমাত্র উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা। পূর্ব্ব-পাকিস্তানের মুসলিম লীগ নেতারা এই ষড়যন্ত্রের সহিত জড়িত ছিল। তাই যখন পূর্ব্ব-পাকিস্তানের ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে পাওয়ার দাবী জোরদার করিল, তখনই জালিম মুসলিম লীগের টনক নড়িল। লীগ-শাহীর পুলিশের গুলিতে ছাত্রদের বুকের রক্তে রাজপথ লালে লাল হইয়া গেল। শহীদ ছাত্র ও যুবকদের রক্তপান করিয়াও জালেমদের তৃপ্তি লাভ হইল না, তাহারা দেশভক্ত তরুণদের কম্যুনিষ্ট, রাষ্ট্রদ্রোহী প্রভৃতি আখ্যা দিয়া নিজেদের কলঙ্ক ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করিল।

 বর্ত্তমানে নির্ব্বাচনের সময় এই মুসলিম লীগ মন্ত্রীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রভাষা করা হইবে বলিয়া মিথ্যা সেত্মাক দিতেছে এবং জাগ্রত জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু জনগণ জানে যে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ইচ্ছা যদি নুরুল আমীন সরকারের থাকিত তাহা হইলে অনর্থক এতগুলি ছাত্র ও তরুণের রক্তপান করিয়া নুরুল আমীন তাহার রক্তপিপাসা মিটাইত না। আর তাছাড়া সদিচ্ছা তাহাদের থাকিলে তাহারা এতদিনে জাতির ইচ্ছা কার্যকরী করিতে পারিত, যেহেতু এতদিন তাহারাই পরিষদসমূহে নিরঙ্কুশ সংব্যক্তিত্বের সুবিধা ভোগ করিয়াছে।