পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৪৫১
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৯৫৬ সালের প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের উপর মওলানা ভাসানীর বক্তব্য দৈনিক সংবাদ ১৬ই জানুয়ারী, ১৯৫৬

খসড়া শাসনতন্ত্র পাকিস্তানের নির্যাতিত জনসাধারণকে শৃংখলিত করার এক মহাষড়যন্ত্রঃ পল্টনের সভায় মওলানা ভাসানীর ঘোষণা........
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

 “প্রস্তাবিত খসড়া শাসনতন্ত্র পাকিস্তানের সাত কোটি নির্যাতিত জনসাধারণকে চির-শৃঙ্খলাবদ্ধ করার এক মহাষড়যন্ত্র। কিন্তু সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জাগ্রত পূর্ব বাংলার জনসাধারণ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর এই হীন চক্রান্তকে বরদাশত করিবে না। আমরা জীবনের বিনিময়েও কায়েমী স্বার্থবাদীদের রচিত এই গণরিরোধী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রাচীর গড়িয়া তুলিতে বদ্ধপরিকর।” নির্যাতিত জননেতা মওলানা ভাসানী গতকল্য অপরাহ্নে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সভাপতির ভাষণে উপরোক্ত ঘোষণা করেন।

 মওলানা ভাসানী অগণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের প্রতিবাদে ১৬ই জানুয়ারী হইতে ২২শে জানুয়ারী পর্যন্ত সাতদিন প্রদেশের ছাত্র, যুবক, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ সকল সম্প্রদায়ের জনসাধারণকে কালোব্যাজ ধারণ করিতে বলেন এবং আগমী ২৯শে জানুয়ারী প্রদেশব্যাপী ‘অগণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রতিরোধ দিবস' পালনের আহবান জানান।

 প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা আতাউর রহমান খান এই খসড়া শাসনতন্ত্রকে কেন্দ্রীয় শাসকচক্রের মুখে রচিত পূর্ব বাংলায় মৃত্যুপরওয়ানা' বলিয়া অভিহিত করেন।

 সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে এরূপ দফর ভিত্তিতে জনগণের স্বার্থের অনুকূলে একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র দাবী করা হইয়াছে-ইহাতে স্পষ্টতঃ বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে স্বীকৃতি দান, যুক্ত নির্বাচন, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং সংখ্যাসাম্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যাপারে সামঞ্জস্য বিধান করিতে হইবে।

 সভায় আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রী দল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র লীগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মপরিষদ ও যুবলীগ প্রভৃতি বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ খসড়া শাসনতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করিয়া বক্তৃতা করেন। বক্তাগণ সকলেই প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনের কথা উল্লেখ করিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছেন। মওলানা ভাসানী কর্তৃক শাসকচক্রের বিরুদ্ধে জীবনমরণ সংগ্রামের আহবানে উপস্থিত জনসাধারণ সমস্বরে হাত তুলিয়া সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

 মওলানা সাহেব তাঁর ভাষণে শাসকচক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, গত আট বৎসরের কেন্দ্র পূর্ব বাংলাকে শোষণ করিয়া এবং ন্যায্য প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত করিয়া অর্থনৈতিক দিক হইতে পঙ্গু করিয়া রাখিয়াছে। ইহার ফলে পূর্ব বাংলায় বেকারত্ব বাড়িয়াছে, শিক্ষিত যুবক রোজগার হইতে বঞ্চিত। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা লোপ পাইতে চলিয়াছে। কৃষক শ্রমিকের রোজগারের পথ রুদ্ধ হওয়ায় তাহারা বর্তমানে বাড়ীঘর বিক্রয় করিতে আরম্ভ করিয়াছে; এমনকি আজ তাহারা একসংগে দশ সের ধান ক্রয় করার ক্ষমতা রাখে না। সরকার একশ দফায় ওয়াদা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিনা খেসারতে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের চেষ্টা করেন নাই। যে ব্যবস্থা করা হইয়াছে তাহাতে সরকার গরীব জনসাধারণের নিকট হইতে ৬০ কোটি টাকা শোষণ করিয়া জমিদারদের খেসারত দিবেন, বর্তমানে এই প্রদেশে আশি লক্ষ ভূমিহীন কৃষক পরিবার রহিয়াছে।