পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬১৭

 প্রাদেশিক কোষাগার থেকে বৎসরে কয়েক লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। রাজস্ব আদায়ের উৎসগুলির বিলি বণ্টনের ক্ষেত্রে সুবিচারের জন্য প্রাদেশিক সরকার দাবী জানিয়ে এসেছে। এতদসত্ত্বেও ১৯৪৮-৮৯ সালে রাজস্বের একমাত্র সম্প্রসারণশীল উৎস “বিক্রয়-কর” ও কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় নেয়া হয়। রাজস্বউৎসগুলির পুনবিন্যাসের জন্য বারংবার দাবী জানাতে থাকায় কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫২-৫৩ সালে এ সম্পর্কে একটি কমিটি গঠনে সম্মত হন, যাকে রেইসম্যান কমিটি বলা হয়। দুঃখের বিষয়, এই কমিটিও প্রদেশকে সাহায্য করে কেন্দ্রকেই জোরদার করে গেছেন। পাট রফতানী শুক্ষের অংশ বণ্টন ব্যাপারে রেইসম্যান কমিটির রোয়েদাদ প্রদেশের সত্যিকার কোন উপকারের পরিবর্তে বরং অপকারই করেছে। ১৯৫০-৫১ ও ১৯৫১-৫২ সালে পাট শুদ্ধ খাতে প্রদেশের আর ছিল যথাক্রমে ৬ কোটি ৭২ লক্ষ ও ৬ কোটি টাকা। কিন্তু রেইসম্যান রোয়েদাদের পর ১৯৫২-৫৩ ও ১৯৫৩-৫৪ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪ কোটি ৩২ লক্ষ ও ৪ কোটি টাকা।

 প্রদেশের আর্থিক অবস্থার ক্রমাগত এই অবনতির আর একটি কারণ হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য প্রাদেশিক সরকার যে সব কাজ করেছেন, সে সকল ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দায়িত্ব পুরাপুরিভাবে পালন করেননি। ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও সীমান্ত পুলিশ বাহিনীর জন্য মোট যা ব্যয় হয়, কেন্দ্রীয় সরকার তার শতকরা ৬০ ভাগ বহন করতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার উক্ত টাকা দেননি। ফলে, এই একটি খাতেই বর্তমান সময় পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।

 বেসামরিক দেশরক্ষা বাবদ যা ব্যয় হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তারও শতকরা ৭৫ ভাগ বহন করার কথা। এ খাতেও পূর্ব পাকিস্তানের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৫৩ লক্ষ টাকা। বারংবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রী সরকার এই খাতে কোন সাহায্যই মঞ্জুর করেননি।

 তা হলে দেখা যাচ্ছে, যে সব কারণে পূর্ব পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা বর্তমানে সঙ্কটজনক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে, তা আজও বিদ্যামান রয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বিশেষ করে “অধিক খাদ্য ফলাও আন্দোলন জোরদার করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদত্ত সাহায্য ও ঋণের অংশ যদি পর্যাপ্ত হতো, তা হলে অধিকাংশ অসুবিধাই আমরা এড়িয়ে যেতে পারতাম। রাজস্বের ক্ষেত্রে আমাদের এই যে ক্রমাগত ঘাটতি এরও অন্যতম কারণ কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে রাজস্ব উৎস বণ্টনের ব্যাপারে অনুসৃত অসম ব্যবস্থা।

ব্যয় সঙ্কোচ

 কেন্দ্রীয় সরকার রাজস্ব খাতের আয় পরীক্ষা ও ব্যয়-হ্রসের জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আগেই আমি বলেছি যে, গত ১০ বছরে আমরা ৩০টি নয়া কর ধার্য করেছি। কিন্তু প্রদেশবাসীর বৈষয়িক অবস্থা অতীব শোচনীয় হওয়ায় আমাদের রাজস্ব খাতে আয় তেমন বাড়েনি। পক্ষান্তরে ব্যয় কমানোও সম্ভব হয়নি। কেননা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উচ্চমূল্য এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সাথে সরকারী চাকুরিয়াদের আয় বা বেতনের সামঞ্জস্য নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যয় আনুপাতিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সে সব-ক্ষেত্রেও ব্যয় সঙ্কোচ করা সম্ভব হয়নি। আর্থিক সাহায্য দানের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অতীতে যে সব অবিচার করা হয়েছে তার আস্ত প্রতিকার এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে উৎসগুলির ন্যায্য ও সুষম বণ্টনের মধ্যেই পুর্ব পাকিস্তানের এসব অভাব-অসুবিধার বাস্তব সমাধান নিহিত।

 রিলিফের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমরা যে সাহায্য চেয়েছি সে সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমি পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া প্রয়োজন মনে করি।

 বিশেষ করে খাদ্য মূল্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত-এই চার মাস পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সব সময়ই সঙ্কটকাল বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ সময় অবস্থা বিশেষে খাদ্যশস্যের মূল্য