পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬৭৭

ফেব্রুয়ারী ২৩

শুক্রবার শহরে অবস্থার আরও অবনতিঃ সরকর কর্তৃক সামরিক বাহিনী তলব


পুলিশ ও সেনাদের গুলিতে ৪জন নিহত ও শাতাধিক ব্যক্তি আহতঃ সাত ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারী


শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে শহরে স্বতস্ফূহর্ত হরতাল পালন


পুলিশ জুলুমের প্রতিবাদে আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের পরিষদ সদস্যপদে এস্তেফা


(স্টাফ রিপোর্টার)

 বৃহস্পতিবারের শোচনীয় ও ভায়াবহ ঘটনা বিস্মৃত হইতে না হইতে গতকল্য (শুক্রবার) জুম্মার দিন আর একবার ঢাকার মাটি শিশু ও ছাত্রের রক্তে লাল হইয়া উঠে। সেদিনকার ঘটনার নিহত ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে শান্তিপূর্ণ মিছিল বাহির করিয়া পুলিশ ও সৈন্যদের গুলীর আঘাতে নাগরিকদের ৪ জনকে প্রাণ বিসর্জন দতে হয় এবং শতাদিক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে নিতে হয়। ইহাদের মধ্যে ৪৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাহাদের ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলিয়া জানা গিয়াছে।

 গতকল্য সমস্ত ঢাকা শহরে উত্তেজনাময় পরিস্থিতি বিরাজ করিতে থাকে। সারা শহরটি আপাতঃদৃষ্টিতে একটি সামরিক ছাউনী বলিয়া প্রতীয়মান হইতে থাকে বিভিন্ন সস্থানে ছাত্র ও জনসাধারণের মিলিত শোভাযাত্রার উপর পুলিশ ও সৈন্য বাহিনী বারম্বার লাঠিচার্জ ও গুলীবর্ষণ করে। সকাল হইতেই মৃত, আহত ও মুমূর্ষ ব্যক্তিগণকে লইয়া এম্বুলেন্স গাড়ীগুলি মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে আসিতে থাকে। কয়েকটি স্থান হইতে মৃত ও গুরুতররূপে আহত কয়েকজনকে পুলিশ ভ্যানে তুলিয়া লইতে দেখ যায় বলিয়া প্রত্যক্ষদর্শীর নিকট হইতে জানা গিয়াছে।

 এইদিন সমগ্র শহরে সমস্ত দোকানপাট বাজার ঘাট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। অফিস-আদালত এমনকি সেক্রেটারিয়েটের কর্মচারীগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মে যোগদান হইতে বিরত থাকিয়া বিভিন্ন সস্থানে শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করে।

 শহীদ ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য শহরের আবার বৃদ্ধ সকলে অবিরামভাবে বিভিন্ন মসজিদে জমায়েত হন এবং গায়েবানা জানাজার নামাজ আদায় করেন। পূর্বদিনের ঘটনায় শহরবাসী প্রতিটি নর-নারী বিষন্ন মনে গতকল্যকার প্রতিটি মুহূর্তের ঘটনা-দুর্ঘটনার অপেক্ষা করিতে থাকে। পুলিশ এইদিন মোট ৫২ জনকে গ্রেফতার করেন।

 এইদিন মেডিক্যাল কলেজ হোষ্টের প্রাঙ্গনে জনাব এ কে, ফজলুর হকের উপস্থিতিতে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনার পর বেলা প্রায় সাড়ে ৩ টায় ছাত্র ও জনসাধারণের এক বিরাট শোভাযাত্রা হোষ্টেল প্রাংগন হইতে হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌছিলে পুলিশ ও সৈন্যরা তাহাদের উপর লাঠিচার্জ ও পরে গুলীবর্ষণ করে ফলে ঘটনাস্থরে কয়েকজন আহত হয় ছত্রভংগ ছাত্রগণ পুনরায় নাজিমুদ্দিন রোডে সমবেত হইয়া শোভাযাত্রা সহকারে চকবাজার, মিটফোর্ড, ইসলামপুর হইয়া সদরঘাটে জগন্নথ কলেজের নিকট পৌছিলে পুলিশ শোভাযাত্রার উপর পরপর তিনবার লাঠি চার্জ করে। চকবাজার এলাকা দিয়া যাইবার সময় স্থানীয় দোকানদার ও জনসাধারন দলে দলে যোগদান করায় শোভাযাত্রার কলেবর বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।