পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬৮১

হইকোর্ট বার এসোসিযেশনের সভা

গতকল্য (শুক্রবার) জনাব এ,কে, ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ঢাকা হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশেনের এক জরুরী সভায় গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মধ্যে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ ছাত্র সমাবেশের উপর পুলিশের গুলীবর্ষণের ফলে উদ্ভহত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

 বিনা কারণে শহরে ১৪৪ ধারা জারী করায় এই সভা সরকারের নিন্দা করিয়া ও অবীলম্বে ইহার প্রত্যাহার দাবী করিয়াও প্রস্তাব গ্রহন করে।

 এই সভা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য পুলিশ কর্মচারীদের অপসারণ এবং রিপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবী জানাইয়া আর একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে।

 এই সভা নিহত ও আহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করিয়া ব্যবস্থা পরিষদ ও গনপরিষদের এই প্রদেশের সদস্যদের নিকট বাংরাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানায়।

জনাব আবুল হাশেমের বিবৃতি

 যুক্তবাংলার প্রাক্তন মুসলিম লীগ সেক্রেটারী জনাব আবুল হাশেম এক বিবৃতিতে বলেন যে আজিকার সভ্যজগতে কোন সভ্যদেশের সরকরী অফিসারগণ কি করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বারংবার নিষেধ সত্তেও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণের মধ্যে নিরস্ত্র ছাত্র ও যুবকদের উপর বেপরোয়াভাবে গুলী চালাইয়া তাহাদের হত্যা করিতে পারে তাহা কল্পনাতীত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলারে বিবৃতি হইতে পরিস্কারভাবেই জানা যায় যে, পুলিশই প্রথমে আক্রমন চালায়। ছেলেদের বুলেটের আঘাতে দাবাইয়া রাখার সরকারী সিদ্ধান্তকে নগ্ন বর্বরতারই পরিচায়ক বলা যাইতে পারে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মার্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যে আল্লাহ ও জনসাধারণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করিয়াছেন সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই। নির্লজ্জ সরকরী জয়ঢাক ঢাকার মর্নিং নিউজ পত্রিকায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের উপর সাম্প্রদায়িকতার ছাপ দেওয়ার জন্য জঘন্যভাবে চেষ্টা করা হইয়াছে। উহাতে বলা হইয়াছে যে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য পূর্ববংগের হিন্দু এম-এল-এ রাই দায়ী এবং হিন্দু মারোয়াড়ী ও অন্যান্য ভারতীয় ব্যবসায়ী স্বার্থের প্রভাবেই নারায়ণগঞ্জে হরতাল সাফল্যমল্কিত হইয়াছে। সত্যকে সাহসের সহিত জনসাধারনের সম্মুখে তুলিয়া দেওয়ার জন্য আমি মিল্লাত, আজাদ ও ইনসাফ পত্রিকার প্রতি অভিনন্দন জানাইতেছি।

 এই দুই দিনে আমরা দেশের কয়েকজন শ্রেষ্ঠ তরুণ ও ছাত্রকে হারাইয়াছি। তাহাদের পবিত্র স্মৃতি পূর্ববংগের জনসাধারনকে চিরদিনই অনুপ্রেরণা যোগাইবে।

মাওলানা ভাসানীর বিবৃতি

 পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাহার বিবৃতিতে বলেন, কর্তৃপক্ষ কি করিয়া এপ নির্মম ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে পারেন তাহা আমার পক্ষে বুঝা শক্ত। প্রতিবাদ দিবসের প্রাক্কালে ১৪৪ ধারা জারী করার কোনই যৌক্তিকতা ছিল না।

 এই বিষয়ে আর বেশী কিছু আলোচনা না করিয়া ঘটনার জন্য আমি একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং অপরাধীদের প্রকাশ্য বিচারের জন্য দাবী করিতেছি।