পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৭২৯

পৃথিবীকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। এই সংগ্রামের শেষ করতে হলে দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে মানব জাতির সীমার ঊর্ধ্বে উঠে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ আসবে সেটি। তাহলে দু’টি মতবাদের সামঞ্জস্য হতে পারে। জগতের শান্তির পথ প্রশস্ত হতে পারে। পৃথিবী শান্তির দিকে অগ্রসর হবে। পৃথিবীর শান্তি আমাদের শান্তি যোগাবে। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্রের Preamble-এ বলেছি যে পৃথিবীতে যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তার চেষ্টা আমরা করব। আমাদের শাসনতন্ত্রের এই কথা যদি আমরা বিশ্বাস করি ও মেনে চলি তাহলে বিশ্বমানবের শান্তির জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবীর দরকার আছে। আর একটা কথা অনেকে বলে থাকেন যে, আমাদের Local Board District Board, Municipality প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের এবং National Assembly-র স্পীকার নির্বাচনে আংশিকভাবে Joint Electorate প্রথা আংশিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমি বলতে চাই যে, Head of the state হচ্ছে Titular figure head যেমন English king হচ্ছে constitutionalt figure head, তাঁর নিজের কার্যাবলী কিছু নেই। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে Municipality. Local Board,—এর নির্বাচন আদর্শের সংগ্রাম নয়। সেখানে হচ্ছে আইন সভার সিদ্ধান্তের Distic Board Union Board Lical Self Govt. Act যে সিদ্ধান্ত আছে তার রূপায়ণ।

 একটা রাস্তা হিন্দু করল কি মুসলমান করল, একটা জলাশয় হিন্দু করল না খৃষ্টান করল এতে কিছু আসে যায় না। সুতরাং সেখানে স্বতন্ত্র বা যুক্ত নির্বাচনের প্রশ্ন আসে না। কিন্তু আইন সভার নির্বাচন একটা স্বতন্ত্র জিনিস। আমাদের শিক্ষা, আমাদের সাংস্কৃতি, আমাদের সভ্যতা, আমাদের তাহবীজ, তমুদ্দুন সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন গোষ্টি, বিভিন্ন পরিবারের লোক দ্বারা এই আইনসভা গঠিত হয়।

 আমি বলেছিলাম যে আমাদের বর্তমান সরকারকে আসি সেই সমস্ত নির্দেশের পথে আকৃষ্ট করতে চাই। সরকার গঠনের মধ্যে তিনটি বিভাগ থাকে একটা হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিষদ, যাকে আমরা বলি বিধান পরিষদ। সেটা হল Legislative Body, সেখানে আইন প্রণয়ন করা হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আইনের বিধান ঠিকমত প্রতিপালন করবার জন্য Executive Body বা শাসন কর্তৃপক্ষ। তৃতীয়টি হচ্ছে এই আইনের বিধান যারা লঙ্ঘন করে তাদের যথাযোগ্য ন্যায়ের তুলাদণ্ডের বিচার করে শাস্তি বিধান করে তা হচ্ছে Judiciary.

 আমরা আজ এই আইন সভায় যে সমস্ত লোক এসেছি তারা বিভিন্ন কৃষ্টি, বিভিন্ন সমাজ, বিভিন্ন আদর্শের প্রতীকরূপেই এখানে মেম্বার হয়ে এসেছি। আমাদের নিজেদের constituency অনুযায়ী আমাদের শিক্ষা, সাংস্কৃতি, তাহজীব, তমুদ্দুন বিভিন্ন, একথা স্বীকৃত সত্য। এই বৈষম্য থাকার কারণ হল আমাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের নিজের কথা বলবার জন্য আজ প্রতিনিধি হিসেবে এই আইন সভায় এসেছি। পৃথকভাবে নির্বাচন হওয়া একান্ত দরকার কারণ, কোন খৃষ্টান কোন মুসলমানের তাহজীব, তমুদ্দুন, প্রকাশ করতে পারে না, কোন হিন্দু জাতির মঙ্গলের রূপায়ণ মুসলমান প্রতিনিধিরা করতে পারে না। সুতরাং এক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা, কৃষ্টি, সাংস্কৃতিক, ভাষা এবং নানা দিক দিয়েই বৈষম্যের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিভিন্ন সমাজ হতে আগত মেম্বাররা সকলেই যে স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী এ কথা স্বীকৃত সত্য। সুতরাং বিভিন্ন জাতীয় সত্তা কথার জন্য আইন পরিষদের নির্বাচন যুক্ত না হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যমে হওয়াই বিধেয়। স্পীকার মহোদয়, একটা কথা শুনতে পাই যে আমাদের কায়েদে আযম যুক্ত নির্বাচনের সমর্থক ছিলেন। এটা জাজ্বল্যমান মিথ্যা এবং স্বদেশ বিরোধী কথা। কায়েদে আযমের সমস্ত জীবনের দৃষ্টান্ত থেকেই এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসে ছিলেন। তখন তিনি দুইটি জাতিকে একত্রিত করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কংগ্রেসের খামখেয়ালির জন্য তিনি পাকিস্তানের দাবী উত্থাপন করেছিলেন। এই দাবী স্বীকৃত হবার পর আমার নূতনভাবে একথা উঠা নিতান্তই অসঙ্গত। আমি এই প্রসঙ্গে কায়েদে আযমের শেষ বাণীর প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তিনি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের National Parliament এর বক্তৃতায় যে কথা বলেছিলেন সেকথাবিজয়ী মুসলমানদের নিকট তার একটা শাশ্বত বাণী এবং বিজিত অমুসলমানদের প্রতি পরাজয়ের গ্লানি ভুলে যাওয়ার একটা মস্তবড় আশ্বাসের বাণী। এই বাণীর আমরা তুলনা করতে পারি। আমাদের রাসুলুল্লাহ বলেছিলেন, তাঁর