পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৭৫৮

যথাযোগ্য প্রচেষ্টা থাকিত তাহা হইলে গত দশ বৎসরে আমাদের এই দেশ বিশেষ অগ্রগতি লাভ করিতে পারিত। স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের দেশে পূর্বাপেক্ষা শিল্পোন্নতি হইয়াছে সত্য। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ইহা যথেষ্ট নহে। সুতিবস্ত্র, সিমেণ্ট, পাট, কাগজ, চিনি প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিল্পের যে অগ্রগতি হইয়াছে তাহাতে এখনও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানো সম্ভবপর হইতেছে না- বিদেশে রফতানি তো দূরের কথা। অবশ্য আমাদের শিল্পজাত কিছু কিছু মাল বিদেশে রফতানি হয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমাদের দেশ শিল্পে প্রভূত অগ্রসর হইয়াছে। লক্ষ লক্ষ লোক আমাদের দেশে বস্ত্র পায় না। অথচ সামান্য কিছু কাপড় বিদেশে পাঠাইয়া সরকার প্রমাণ করিতে চাহিতেছেন যে আমাদের দেশের শিল্পোন্নয়ন হইয়া গিয়াছে।

 দেশে শিল্পের উন্নতির বিরাট সম্ভাবনা সত্ত্বেও আমাদের দেশের শিল্পের এই অবস্থার জন্য দায়ী সরকার। আমাদের পাট, তুলা প্রভৃতির বিনিময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হইতে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানীর যে সুবিধা ছিল মুসলিম লীগ সরকার বা লীগ-যুক্তফ্রণ্ট সরকার সে সুযোগ কাজে লাগান নাই। আওয়ামী কোয়ালিশন সরকারও এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে নূতন কিছু করেন নাই। শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল প্রভৃতির জন্য সরকার নির্ভর করিতেছেন যাহাদের উপর তাহাদের নিকট হইতে সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায় নাই। অথচ পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেও সরকার নারাজ। ফলে আমাদের দেশের শিল্পোন্নতির পথে আজ নানাবিধ বাধা বিঘ্ন উপস্থিত হইতেছে। এবং যাহারা শিল্প গড়িতে চান তাহারা পরিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পাইতেছেন না। তাই স্বাধীনতা লাভের দশ বৎসর কাটিয়া গেলেও আমাদের দেশের পশ্চাৎপদতা কাটে নাই।

 আমরা বার বার দাবী করিয়া আসিতেছি পূর্ব পাকিস্তানকে শিল্পায়িত করা হউক। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকার ও যুক্তফ্রণ্ট লীগ সরকার পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য দাবী বিবেচনা করা তো দূরের কথা ইহাকে প্রাদেশিকতা বলিয়া প্রচার করিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের ভাইগণকে পূর্ব পাকিস্তানের ভাইগণের বিরুদ্ধে বিষাক্ত করিবার অপচেষ্টা করিয়াছে।

 আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার গঠিত হওয়ার পরেও দেশকে শিল্পায়িত করার প্রশ্নে পূর্বকার নীতি অনুসৃত হইতেছে। এই সরকার ২১ দফা ওয়াদা অনুসারে দেশকে শিল্পায়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল। কিন্তু সে ওয়াদা তাঁহারা পালন করেন নাই। তাঁহারা দেশকে শিল্পায়িত করার জন্য কোনরূপ সুষ্ঠু নীতি এখন পর্যন্ত প্রণয়ন করেন নাই।

শ্রমিক সমস্যাঃ

 বন্ধুগণ, মাত্র যে কয়েকটি শিল্প-কারখানা এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, সরকারী অব্যবস্থার দরুন তাদের কয়েকটি বছরের অনেক সময় কাঁচামালের অভাবে অসুবিধা ভোগ করে। বিশেষ করিয়া কাপড়ের কলগুলির কথা বলিতেছি।

 শ্রমিক শোষন ধনতান্ত্রিক দেশসমূহের কতটা নীতিগত ব্যাপার। কাজেই শ্রমিক-মালিক তিক্ততা সেসব দেশের নিত্যনৈমিত্তিক কথা। কিন্তু আমাদের দেশের মত একটি অনগ্রসর দেশে যাহাতে শ্রমিক মালিকের তিক্ততা বৃদ্ধি না পায় দেশকে শিল্পায়িত করার শর্ত হিসাবে সরকারের সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

 কিন্তু এ পর্যন্ত কোন সরকারই শ্রমিকদের জীবনধারণের উপযোগী মজুরী, তাহাদের উপযুক্ত বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি কোন বিষয়েই কিছু করেন নাই। ন্যায্য দাবীর জন্য শ্রমিক বৈধ আন্দোলন করিলে সরকার শ্রমিকদের উপর শুধুমাত্র দমন নীতি চালাইয়া গিয়াছেন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের শ্রমিকগণ বর্তমানে যে মজুরী পাইয়া থাকেন তদ্বারা তাহাদের স্ত্রী-পুত্র নিয়া জীবনধারণ করাই কঠিন। বহু ক্ষেত্রে শ্রমিকরা এমন সব বস্তিতে