পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

183 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাপত্র তারিখ সম্পদকীয় ংলার মুখ ২৭ আগষ্ট, ১৯৭১ বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ ১ম বর্ষঃ ৩য় সংখ্যা বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ জাতিসংঘ নামে বিশ্বের বুকে একটা আন্তর্জাতিক বিশ্ব সংগঠনের অস্তিত্ব আছে-একথা সংগ্রামী বাংলার মানুষ আজ আর বিশ্বাস করতে চায় না। একদিন তারা জানতো বিশ্ব মানবতার জন্য এ নামে একটা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। লীগ অব ন্যাশনস এর পরিবর্তিত, সংশোধিত রূপ এই জাতিসংঘ মানব কল্যাণ্যের জন্য অত্যাচার নির্যাতন ও মানবীয় শোষণের অবসাণের জন্য কিছু করা অন্তত করার দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব হয়েছে এ বিশ্বাসও বাংলাদেশের জনগণের ছিল। কিন্তু আজ আর তারা এ কথা বিশ্বাস করতে চায় না আর চাইবে কিনা তাতেও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বঞ্চিত, সংগ্রামী বিশ্বের জনতার কাছে বেশি প্রকট হয়েছে। যে আশা নিয়ে, আকাঙ্খা নিয়ে, সাহায্যের তীব্র ইচ্ছা নিয়ে সর্বোপরি মানবতার সেবা পাবার আগ্রহ নিয়ে যখনই তারা হাত বাড়িয়েছে, তখনি জাতিসংঘের সদর মহলের প্রবেশপথে কারো পর্দা ঝুলে পড়েছে। তাহা রিক্তহস্তে করুণভাবে ফিরে এসেছে। বিশ্বের এই সংগ্রামী মানুষগুলোর সাথে বাংলার সংগ্রামী নরনারীও আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের সদর দরজার কাছ থেকে তেমনি ফিরে এসেছে আসছে। হয়তো এমনি আঘাত পেয়ে আরও বহুবার ফিরে আসতে হবে। মূলতঃ কার্যদৃষ্টে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, জাতিসংঘ নামে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের গুটিকয় বড় শক্তির বৈঠকখানা বিশেষ। চা খাওয়া, আড্ডা দেয়া, প্রয়োজনবোধে তাস পাশা খেলার সুন্দর ব্যবস্থা বিশেষ এই জাতিসংঘের সদর দফরতটি। তার কর্মকর্তারা বৃহৎ শক্তিগুলোর হর্তা-কর্তা আড্ডাবাজদের হুকুমের কর্মচারী বিশেষ। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের কাছ থেকে সংগ্রামী বাংলাদেশ কি আশা করতে পারে। পক্ষান্তরে বিশ্বের দুটি শক্তি ক্ষমতার রাজনীতির নেশায় এমনভাবে মজেছে যে, মানবদরদি, শোষণ-নির্যাতনের বিরোধী বলে পরিচিত এ দুই রাষ্ট্রের বিবেকের সকল অনুভূতির যেন বিলুপ্তি ঘটেছে। অন্যরা আজ মেরুদণ্ডহীন প্রাণীবিশেষ। আত্মবিশ্বাস, আত্মশক্তি, ন্যায়বোধ বলতে যে তাদের কিছুই নাই। এদিকে আজকের বিশ্বের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যার শক্তি নাই, সম্পদ নাই, আত্মবিশ্বাস নাই, সম্মান ও মর্যাদাবোধ নাই তার কদর নিজের কাছে তো নাই, পরের কাছে তো মোটেও নাই। সম্পদ ও ক্ষমতা এ দুটোই অমোঘ অস্ত্র। এ দুটোর নির্দেশেই সবাই উঠানামা-বসা-শোয়া করছে। জাতিসংঘও তাই বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্রীড়নক হয়ে কাজ করুক, তাতে তাদের মেরুদণ্ড বিবেকহীন অস্থিমজ্জায় বাধে না। বাধবে না।

  • বাংলার মুখঃ একটি সংবাদ নিবদ্ধ সাপ্তাহিক। সম্পাদকঃ সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী রঞ্জিনা প্রকাশনীর পক্ষে সম্পাদক কর্তৃক পলাশ আর্ট প্রেস মুজিব নগর বাংলাদেশ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।