পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

187 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ মুক্তি সংগ্রামের নতুন দিক ংলার মুখ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা মুক্তি সংগ্রামের নতুন দিক অধিকৃত বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী ইসলামবাহিনী বিতাড়নের জন্য মক্তিবাহিনী যেমন তৎপর হয়ে উঠেছে, তেমনি তৎপর হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট কুটনীতিবিদরা। বিভিন্ন রাষ্ট্রে নিযুক্ত কুটনীতিবিদরা পাকিস্তানীদের সাথে সম্পর্কছেদ করে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সংগ্রামের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং একই সাথে তারা কুটনৈতিক সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। আধুনিক সশস্ত্র সংগ্রামের কূটনৈতিক চালের যে মূল্য নেই এ কথা বলা মুশকিল। বিশেষতঃ বিরোধী শক্তি যদি কোন বিশেষ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর কূটনৈতিক আশ্রয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সংগ্রামী পক্ষকেও গ্রহণ করতে হয় অনুরূপ কূটনৈতিক পদ্ধতি। সংগ্রামে প্রচারের ভূমিকার পাশেই কূটনৈতিক মারপ্যাঁচের স্থান নির্ধারিত করা যেতে পারে। অনস্বীকার্য যে বিশ্বের প্রতিটি সংগ্রামী জনসাধারণ আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য খুঁজেছে কোন না কোন কটনৈতিক দিকে ক্ষমতাবান দেশকে। এর অন্যমত কারণ, যে দেশগুলোর স্বাধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে এমন কতকগুলি শক্তির বিরুদ্ধে যে শক্তিগুলোর পেছনে ছিল উপনিবেশবাদী সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী ক্ষমতা। তাই তাদের সংগ্রামে প্রয়োজন হয়েছে অনুরূপ ক্ষমতাবান শক্তির সমর্থন। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম দিকে আমরা শুধু শত্রর মোকাবিলা করেছি অস্ত্রে, অন্যদিকে শত্রু শুধু অস্ত্রেই নয়, তার প্রচার মাধ্যমে ও কূটনৈতিক মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে প্রকৃত ঘটনা থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব এবং জোটবহির্ভূত তৃতীয় বিশ্ব নামে কথিত শান্তিকামী দেশগুলো শুধু অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থেকেছে। কারণ বাংলাদেশের সামগ্রিক ঘটনা তাদের কাছে পৌঁছায়নি। যেটুকু পৌছেছিল তা হল জবরদখলকারীর বিকৃতি। আমরা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি জনগোষ্ঠী ছিলাম এবং আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে স্বৈরাচারী সরকার যে শোষণকে কায়েম রাখতে চেয়েছে এবং আমাদের ওপর সশস্ত্র সংগ্রাম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এ কথা জানতে পারেনি বিশ্বের কেউই বরঞ্চ বিশ্ব জনমতের এই ভ্রান্তির সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী আমাদের দেশটাকে ও সংগ্রামটাকে তাদের স্বার্থে ষ্ট্রাটেজিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চেয়েছে। কূটনৈতিক চালে ফেলে আমাদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। কমনওয়েলথে বাংলাদেশের যোগদান করার কথা ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি জনাব কে, এম, শাহাবুদ্দিন এবং এ জন্যই জনাব হোসেন আলীকে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। নয়াদিল্লীতে হাইকমিশনারের অফিসও স্থাপিত হচ্ছে। আবার অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে তাদের প্রতিনিধি পাঠাবার কথাও ঘোষাণা করেছেন। সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের অন্যতম উদ্দেশ্য জাতিসংঘের সমর্থন অর্জন। অন্যদিকে এও জানা গেছে যে আসন্ন সাধারন পরিষদের অধিবেশনে ভারত সরকার বাংলাদেশ প্রশ্ন উত্থাপন করবে। এ ব্যাপারে ভরত সরকার হয়ত সোভিয়েট রাশিয়ার সাহায্য অথবা অনুমোদনও নিতে পারে। রাজনৈতিক মহল এ নিয়ে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে।