পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

267 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ নিশ্চিত পরাজয়ের সম্মুখীন জঙ্গীশাহীর ব্যর্থতা | বাংলার বাণী ২ নভেম্বর, ১৯৭১ চাপা দেওয়ার নয়া কৌশল মুজিবনগরঃ ১০ম সংখ্যা নিশ্চিত পরাজয়ের সম্মুখীন জঙ্গীশাহীর ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার নয়া কৌশল (রাজনৈতিক ভাষ্যকার) ইসলামাবাদের হানাদার জঙ্গীশাহী বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা লইয়াই শুধু ফ্যাসাদে পড়ে নাইইসলামাবাদ সাম্রাজ্য লইয়াও মহা ফ্যাসাদে পড়িয়াছে বলিয়া নির্ভরযোগ্যসূত্রে খবর পাওয়া গিয়াছে। জঙ্গীচক্র ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যের বিক্ষুব্ধ বেলুচিস্তান এবং মুক্তিকামী পাখতুনদের এখন আর বিশ্বাস করিতেছে না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় জল্লাদশাহী এখন “আন্ধার ঘরে সবই সাপ” দেখিতে শুরু করিয়াছে। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত খান সেনাদের পরিবার পরিজন এবং আত্মীয় স্বজনগণও এখন জঙ্গীশাহীর উপর তীব্র ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ হইতে যে এক ডিভিশন সৈন্য প্রত্যাহার করিয়া ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে লইয়া যাওয়া হইয়াছে ইহাদের অধিকাংশই পশ্চিম-পাঞ্জাবী এবং অবশিষ্টদের মধ্যে কিছু সিন্ধি সৈন্য রহিয়াছে। কিন্তু বালুচ এবং পাঠান সৈন্য নাই। ভারতের সহিত সম্ভাব্য যুদ্ধের সুযোগ বিক্ষুদ্ধ বালুচ-পাঠানগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করিতে পারেন এই ভয়েই ইহাদিগকে বদলী করিয়া ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে নেওয়া হয় নাই। উক্ত এক ডিভিশন সৈন্যের মধ্যে পাঠান বালুচ সৈন্য না থাকায় পাঠান ও বালুচ মুলুকে জঙ্গীচক্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ধূমায়িত হইয়া উঠিয়াছে। বাংলাদেশে যাহারা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে খতম হইতেছে ইসলামাবাদ সাম্রাজ্য নিবাসী তাহদের আত্মীয়-স্বজনদের নিকট উহাদের মৃত্যুর খবর সম্পূর্ণ গোপন করিয়া রাখা হইতেছে। বাংলাদেশে ইহাদের অবস্থা সম্পর্কে যাহাতে তাহদের আত্মীয়স্বজন কিছু জানিতে না পারে তজ্জন্য বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা হইতে হানাদার সৈন্যগণকে অবাধে চিঠিপত্র লিখিতেও অনুমতি দেওয়া হয় না। চিঠিপত্র কড়া সেন্সর করার পর ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে প্রেরণ করা হইয়া থাকে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধের প্রারম্ভে হানাদার নিহত সৈনিকদের লাশ ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে তাহাদের নিকট প্রেরণ করা হইত। তাহাতে বিক্ষুব্ধ হইয়া লাহোর রাওয়ালপিণ্ডির রাজপথে জঙ্গীচক্রের বিরুদ্ধে পুত্রহারা, স্বামীহারা, ভ্রাতৃহারা আর পিতৃহীন নর-নারীর সরোষ বিক্ষোভ মিছিলের পর হইতে জঙ্গীশাহী বাংলাদেশ হইতে ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে আর সৈনিকদের লাশ প্রেরণ করে না। বাংলাদেশের নদীতে ভাসাইয়া দেয় কিংবা মাটিতে গাঁথিয়া রাখে। অবশ্য ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে নিহত সৈনিকদের লাশ প্রেরণ না করার আরও একটি কারণ আছে। তাহা হইতেছে- জঙ্গীশাহী এত লাশ আর বিমানে পাঠাইয়া কুলাইতে পারে না। বাংলাদেশে নিহত সৈনিকদের মৃত্যু সংবাদ তাহাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিকট গোপন রাখার উদ্দেশ্যে ইদানীং জঙ্গীচক্র নিহত সৈনিকদের আত্মীয়-স্বজনদের সহিত এক নিদারুন প্রতারণা করিয়া চলিয়াছে। জানা যায়, জঙ্গীচক্র বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা হইতে নিহত সৈনিকদের নামে তাহদের আত্মীয়স্বজনদের নিকট নিয়মিত চিঠিপত্র লিখাইয়া থাকে। শুধু তাহাই নহে, নিহত সৈনিকদের আত্মীয়-স্বজনের ঠিকানায় নিয়মিত কিছু টাকাও প্রেরণ করা হইয়া থাকে।