পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

294 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সাম্রাজ্যবাদের ট্রয়ের ঘোড়া নতুন বাংলা ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ পাকিস্তান - ১ম বর্ষঃ ৫ম সংখ্যা_| সাম্রাজ্যবাদের ট্রয়ের ঘোড়া পাকিস্তান আলী ইমাম পাকিস্তান একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্র। আর এই অবাস্তব রাষ্ট্র টিকাইয়া রাখার জন্য চাই ফ্যাসিষ্ট সরকার। গত ২৪ বছরের ইতিহাস ইহার সাক্ষ্য। পাকিস্তান কায়েম হওয়ার পর আজ পর্যন্ত ইহার কোন শাসনতন্ত্র রচনা করা হয় নাই। কারণ পাকিস্তানের শাসকবর্গের নিকট ইহা কাম্য ছিল না। সীমাহীন অত্যাচার নিপীড়ন, জেলজুলুম আর গুলি চালাইয়া পাকিস্তানী শাসকবর্গ ইহার দ্বিজাতিতত্ত্বের মিথ (myth) কোন মতে ঠেকা দিয়া দাঁড় করাইয়া রাখিয়াছিল। আজ বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম সেই দ্বিজাতিতত্ত্বকে উপড়াইয়া ফেলিয়াছে। ফ্যাসিষ্ট ইয়াহিয়া চক্রটি গত ২৪ বছর যাবৎ সযত্ন লালিত বিষবৃক্ষের ফল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর কালে সারা পৃথিবীতে উপনিবেশ ও আধা উপনিবেশ দেশগুলিতে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়। এই মুক্তিসংগ্রামের মুখে সাম্রাজ্যবাদ পিছু হঠিতে থাকে। কিন্তু উপনিবেশ হইতে চলিয়া যাওয়ার সময় বিভিন্নভাবে তাহদের স্বার্থেরও খুঁটাটা শক্ত করিয়া রাখিয়া যায়। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সুচতুর চালে এবং মুক্তি সংগ্রামের দুর্বলতার জন্য এশীয় ভূখণ্ডে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ট্রয়ের ঘোড়া হিসাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করে। ধর্ম ও ভারতদ্বেষিতাকে মূলধন করিয়া ই পাকিস্তান তাহার আভ্যন্তরীণ নীতি। বৈদেশিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্ট এই ট্রয়ের ঘোড়া সকলদেশের মুক্তি সংগ্রামের ক্ষতি সাধনে তৎপর রহিয়াছে। মিত্রের ছদ্মবেশে এবং ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের ঐক্যের বুলির আড়ালে সাম্রাজ্যবাদের এই বাহনটি ব্যবহার করা হইতেছে। ১৯৫৬ সালে বৃটেন, ফ্রান্স ও ইসরাইল যখন একযোগে মিসর আক্রমণ করে তখন পাকিস্তান সরকার বৃটেনের প্রতি সমর্থন জানাইয়াছিল। ক্ষুব্ধ নাসের তৎকালীন পাকিস্তানী জৈনক মন্ত্রীকে মিসরে ঢুকিতে বারণ করিয়াছিলেন। বান্দুং সম্মেলনও পাকিস্তান ব্যর্থ করিতে চাহিয়াছিল। কিন্তু সাধ্যে কুলায় নাই। পঞ্চশীলার স্থলে পাকিস্তানের সপ্ত-স্তম্ভের নীতি পাল্টা দাঁড় করাইবার প্রয়াস হইতে ইহা বুঝা যায়। হাভানায় ত্রিমহাদেশীয় সম্মেলনেও কাশীর সমস্যাকে চাল হিসাবে ব্যবহার করিতে চাহিয়াছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের এই ট্রয়ের ঘোড়াটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুক্তি সংগ্রামে ও জাতীয় স্বাধিকার সংগ্রামের সর্বাপেক্ষা ক্ষতি করিয়াছে ও ক্ষতি সাধন করিতেছে। মুখে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বুলি আওড়াইয়া সাম্রাজ্যবাদের এই সেব্যদাসী ইঙ্গ-মার্কিন প্রভূর মনস্তুষ্টি সাধনে ব্যগ্র। মধ্যপ্রাচ্যে বাগদাদ প্যাক্ট ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সিটাে চুক্তি করিয়া পাকিস্তান সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত সহচরদের মধ্যে স্থান করিয়া লইয়াছে। ইরাকে রাজতন্ত্র বিরোধী সফল অভু্যত্থান বাগদাদ চুক্তির ভিত্তি কাঁপাইয়া তোলে। ইরাক বাগদাদ চুক্তি হইতে বাহির হইয়া যায়। পরবর্তী সময়ে এই প্যাক্ট সেন্টো নামে অভিহিত হয়। সেন্টোর সদস্য হিসাবে পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পৃষ্টে ছুরিকাঘাতে করিয়া চলিয়াছে। মধ্য প্রাচ্যের প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রগুলিকে সর্বতোভাবে পাকিস্তান সাহায্য করিতেছে।