পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

367 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় জাগ্রত বাংলা ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ যুদ্ধ ও শান্তি ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা সম্পাদকীয় যুদ্ধ ও শান্তি আপাতদৃষ্টে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রকেই অত্যন্ত শান্তিকামী বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনতিবিলম্বে যুদ্ধরত ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সৈন্য প্রত্যাহার এবং অস্ত্রসংবরণের প্রস্তাবটিতে সমর্থন জানানো হইয়াছে। যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব নিঃসন্দেহে সমর্থনযোগ্য, আমরাও যুদ্ধের বিরোধিতা করি। আমরা জানি, যদ্ধ মানুষের প্রগতি ও কল্যাণের পথে অন্তরায়। কিন্তু যুদ্ধেরও রকমফের রহিয়াছে; সমস্ত যুদ্ধই এক সারিতে পড়ে না। কোন জাতির উপর যুদ্ধ চাপাইয়া দেওয়াকে আমরা অন্যায় বলি। অন্যায়কে সুদৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করিতে গিয়া যে সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া প্রযোজন, তাহাকে বলি ন্যায়যুদ্ধ। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী চক্রের মোড়ল, ঐশ্বৰ্য্যশালী আমেরিকা যুদ্ধ চাপাইয়া দিয়েছে দরিদ্র ভিয়েতনামীদের ওপর। তাই পক্ষে সংবেদিত। তেমনি বঞ্চিত, নির্যাতিত বাংগালীদের ওপরও যুদ্ধ চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। সেইদিন ধর্ষিতা বোন ও নিহত ভাইয়ের রক্ত ছুইয়া দেশকে মুক্ত করার শপথ নিয়াছিল যুগযুগের তন্দ্রাচ্ছন্ন নিরীহ বাঙ্গালী বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কানে এইসব সংবাদ পৌছায় নাই বলিলে ভুল হইবে; যে কোন দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও বেতার ও সংবাদপত্রের বদৌলতে বিপুলা ধরনী অতি ক্ষুদ্র একটি গালফ বই কিছুই নহে। তবুও সকলে হঠাৎ আজ যুদ্ধের নামে এত উদ্বিগ্ন কেন? পাকিস্তানের জঙ্গীচক্র প্রায় এক কোটি বাঙালীকে শরণার্থীরূপে ভারতে পাঠাইয়া দিয়া ঐ দেশের অর্থনীতির ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে একটি যুদ্ধেরই সুত্রপাত করে। উপরন্তু কিছুদিন যাবত ভারত সীমান্তে গোলাগুলি করিয়া বিশ্ববাসীকে সে এই বলিয়া ধোঁকাও দিতে চাহিয়াছিল যে, তাহার যুদ্ধ ভারতেরই সহিত, বাংলাদেশের সহিত নহে। অবশেষে সে পুরাদমেই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়া গেল। উহারই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে নিজ স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের সাহায্যার্থে যুদ্ধে নামিতে হইয়াছে। এতদিন যাবত মিসেস গান্ধী যে সংযম দেখাইয়াছেন তাহা ইতিহাসে দৃষ্টান্তবিহীন। দেয়। পরে বিষয়টি আমেরিকারই ইঙ্গিতে সাধারণ পরিষদে স্থান পায়। মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্রগুলি ইহাতে সমর্থন জানাইয়াছে। অবশ্য প্রস্তাবটি একান্তই পালনীয় নহে; এবং ভারত জাতিসংঘের চোখ রাঙ্গালীকে ভয় পায় না। অতএব পাকিস্তানের ধ্বংস অনিবার্য। তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক গণচীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই পাকিস্তানের বিজয় কামনা করিয়াছেন। আমরাও ভুলিয়া যাই নাই সাম্রাজ্যলিপ্সু চীন ১৯৬২ সালে আক্রমণ করিয়াছিল ভারতকে এবং মাত্র কিছুকাল আগেও মানবতার অকৃত্রিম বন্ধু বৃহৎশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্তে বাধাইয়াছিল সংঘর্ষ। পরিশেষে আমরা পৃথিবীর শান্তিবাদী রাষ্ট্র ও ব্যক্তিবর্গকে আহবান জানাই, তাঁহারা যেন নিরপেক্ষতার ভান