পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

389 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড এই জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা এই অভিমত প্রকাশ করিতেছেন যে বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল পাক-ভারত যুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের একটি জোর প্রচেষ্টা শুরু করিয়াছে। এই সমস্ত রাজনৈতিক ভাষ্যকারের বিশ্লেষণ হইতেছেঃ পাক ভারত যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্ত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহল আন্তর্জাতিক সালিশীর নামে বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে নাক গলাইবার সুযোগ পাইবে, তাসখন্দ চুক্তির অনুরূপ যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদন করাইতে পারবে এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্ৰীয় কাঠামোর মধ্যে রাখিয়াই শিথিল কনফেডারেশনের ধুয়া তুলিয়া রাজনৈতিক সমাধানের কুইনাইন গিলাইতে পারিবে। তাহা ছাড়া তখন এই কথা বলা যাইবে যে, বাংলাদেশ ইসৃটির মীমাংসার জন্য সকল রকম প্রচেষ্টাই চালানো হইয়াছে, এমন কি শেষ পর্যন্ত পাক ভারত যুদ্ধও হইয়া গেলো, তাই এখন রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া আর উপায়ই বা কি ? এইভাবে বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাইবে বলিয়া এই সমস্ত স্বার্থবাদীরা মনে করে। অন্যদিকে একই কারণে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পক্ষেও এই ধরনের একটি যুদ্ধ বাধাইবার প্রচেষ্টা চালানো স্বাভাবিক। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ক্রমাগত উস্কানীর মুখে এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে ভারতেরও এই ধরনের একটি যুদ্ধে জড়াইয়া পড়ার আশংকা রহিয়াছে বলিয়া এইসব রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা মনে করেন। এই সমস্ত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত যাহাই ইউক না কেন এবং পাক ভারত যুদ্ধ হউক বা না হউক রাজনৈতিক সমাধানের যে জোর প্রচেষ্টা চলিয়াছে ইহাতে কোন সন্দেহ নাই বলিয়া আমরা মনে করি। তাই আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আকাশে ঘনকালো মেঘের অশুভ ছায়া দেখা দিয়াছে। আগামী দুটি মাস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ও জটিল সময়। এই জন্যই বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা সকল স্বাধীনতাকামী শক্তি, মুক্তিফৌজ এবং বিপ্লবী গেরিলা বাহিনীকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আজ হুঁশিয়ার হওয়া ঐতিহাসিক কারণেই মহান দায়িত্ব ও কৰ্ত্তব্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। আমরা তাই পুনরায় বাংলাদেশ সরকার ও আওয়ামী লীগসহ সকল সংগ্রামী শক্তিকে নিম্নতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে ব্যাপক জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপূরক একটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত জাতীয় মুক্তিফ্রন্টের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার উদাত্ত আহবান জানাই। আমরা সকল সংগ্রামী শক্তি, মুক্তিফৌজ, বিপ্লবী গেরিলা বাহিনীর প্রতি পারস্পারিক সংযোগ ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিকে সুসংহত করার আকুল আবেদন জানাই। সকল বামপন্থী শক্তির প্রতিও আমরা সংগ্রামের মধ্যদিয়া চিন্তাধারা ও কাজের ঐক্যের ভিত্তিতে শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী আদর্শে উদ্বুদ্ধ একটি সুসংহত বিপ্লবী পার্টি গড়িয়া তোলার উদাত্ত আহবান জানাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সংগ্রামকে প্রকৃত জনযুদ্ধে পরিণত করিয়া বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে শক্তির মূল উৎস করিয়া আত্মনির্ভরশীল হইতে পারিলেই একমাত্র দেশী-বিদেশী এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করা সম্ভব-ইহার বিকল্প অন্য কোন পথ নেই। উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশের সকল সংগ্রামী শক্তি, মুক্তিফৌজ, বামপন্থী প্রগতিশীল মহল এবং বিপ্লবী গেরিলা বাহিনীর নিকট নিনোক্ত আশু করণীয় কর্তব্য উপস্থিত করিতেছি। ১। জনগণের পাশে যাইয়া দাঁড়ান আর এক মুহুর্তেও দেরী না করিয়া আমাদের শক্তির একমাত্র উৎস বাংলাদেশের জনগণের পাশে যাইয়া দাঁড়াইতে হইবে। রাজনৈতিক সমাধানের যে অশুভ তৎপরতা শুরু হইয়াছে, সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করিয়া তুলিতে হইবে। রাজনৈতিক প্রচার আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংগঠনের উপর আমাদের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিতে হইবে। জনতাকে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করিয়া তুলিতে হইবে।