পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

390 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ২। জাতীয় সংগ্রামের সহিত কৃষকের শোষণ মুক্তির সংগ্রাম যুক্ত করুন গ্রামে গ্রামে জনতার বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধি লইয়া সবর্বদলীয় গণমুক্তি পরিষদ গঠন করিয়া নিম্নোক্ত কর্মসূচী বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে এই সংগ্রামে কৃষককে প্রত্যক্ষভাবে নামাইতে হইবে। ক) জাতীয় শত্রদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিয়া গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করিতে হইবে। খ) যে সকল জোতদার মহাজন জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে রহিয়াছে তাহদের প্রতি নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু সাথে সাথে এই সমস্ত জোতদারদের নিকট হইতে জাতীয় মুক্তির বৃহত্তর স্বার্থে কৃষকদের সুযোগ সুবিধা আদায় করিতে হইবে। এই জন্য বর্গাচাষীরা পূর্বের তুলনায় ফসলের অংশ বেশী করিয়া যাহাতে পায় তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে। স্থান ও অবস্থাবিশেষে এই সমস্ত জোতদারদের জমির সিলিংও নির্দিষ্ট করিয়া দিতে হইবে। মহাজনের চড়া হারে সুদ আদায় বন্ধ করিতে হইবে। মজুতদারদের প্রয়োজনরিতিক্ত খাদ্যশস্য গরীব সাধারণের মধ্যে স্বল্পমূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিতে হইবে। ক্ষেতমজুরদের মজুরী বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা চাষাবাদের জন্য দিতে হইবে এবং এইভাবে গ্রামে টাউট বদমাইশদের হাত হইতে শরণার্থীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হইবে। ৩। নীচের দিক হইতে সংগ্রামী ঐক্য গড়িয়া তুলুন সকল স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল, গণ ও শ্রেণী সংগঠন, মুক্তিফৌজ এবং বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী তাহাদের রাজনৈতিক ও সামরিক কার্যক্রমকে সমন্বিত করুন এবং পরস্পরের মধ্যে অন্তরঙ্গ সংগ্রামী সম্পর্ক গড়িয়া তুলুন। মুক্তিফৌজ এবং বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী পরস্পরের মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয় সাধন করিয়া শত্রকে আঘাত করার ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী গ্রহণ করুন। মুক্তিফৌজকে আশ্রয়, খাদ্য ও রসদ দিয়া সাহায্য করুন। এইভাবে সংগ্রামের ময়দানে মুক্তি সংগ্রামের সকল শক্তি নীচের দিক হইতে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করিয়া জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গড়িয়া তোলার দৃঢ় ভিত্তি প্রস্তুত করুন। ৪। পূর্ণ জাতীয় মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াইকে অব্যাহত রাখুন যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর জল্লাদ হানাদার বাহিনীর দসু্য সৈন্য বাংলাদেশের মাটি হইতে উৎখাত না হইতেছে, যতদিন সম্পূর্ণ স্বাধীন, সার্বভৌম জনতার স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত না হইতেছে, ততদিন মুক্তিযুদ্ধকে যে কোন মূল্যের বিনিময়ে অব্যাহত রাখার লৌহ-কঠিন শপথ গ্রহণ করুন এবং আপোষহীন সংগ্রামের আঘাতের পর আঘাতে মুক্তিযুদ্ধকে আরও দুর্বার করিয়া তুলুন। কৃষক জনতাকে সশস্ত্র করুন, গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের ঘাঁটি প্রস্তুত করুন, গণযুদ্ধকে ক্রমান্বয়ে বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে এবং বিশাল জনতার মধ্যে ছড়াইয়া দিন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরও বেশী করিয়া লড়াইয়ের পশ্চাদভূমি (Rear base) এবং রাজনৈতিক ও সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্র স্থাপন করুন। হানাদার বাহিনী যে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটাইবে এবং সীমান্ত সংঘর্ষ যত বেশী আত্মস্থ (Absorbed) হইবে, তত বেশী করিয়া শত্রকে পশ্চাৎদিক হইতে আক্রমণ করার সুযোগ সৃষ্টি হইবে-এই সুযোগের প্রতিটি অণু পরমাণুর সদ্ব্যবহার করুন। ৫। কৃষক-জনতার মধ্য হইতে মুক্তিফৌজের সহায়ক শক্তি হিসাবে বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী গড়িয়া তুলুন কৃষক জনতার মধ্য হইতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গেরিলা দল গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক ঘাঁটি এলাকাকে কেন্দ্র করিয়া বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী গড়িয়া তুলুন এবং গেরিলা যুদ্ধকে ধাপে ধাপে বিকশিত করুন। গেরিলা যুদ্ধের নীতি ও কৌশলকে লড়াইয়ের বর্তমান পর্যায়ে প্রধান নীতি ও কৌশল হিসাবে গ্রহণ করুন। মুক্তিফৌজ এবং বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী পরস্পরের পরিপূরক ও সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করার কার্যকরী পন্থা গ্রহণ করুন।