পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

396 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় দেশ বাংলা ১১ নভেম্বর, ১৯৭১ সাড়ে সাত কোটি হোসেন আলী ১ম বর্ষঃ ৩য় সংখ্যা সম্পাদকীয় সাড়ে সাত কোটি হোসেন আলী নয়া দিল্লীর পাকিস্তানী দূতাবাসটি এখন বাঙালীশূন্য। না, অন্ততঃ একজন বাঙালী এখনো সেখানে আছেন। তিনি জনাব হোসেন আলী, হাই কমিশনারের একান্ত সচিব। উৎপীড়নের শিকার হয়ে রয়েছেন। দিল্লীর ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অবুঝ ছেলে দুটি পিতার মুক্তির জন্য ধরনা দিতে গিয়ে কেদে বুক ভাসাচ্ছে। অসহায় সহকর্মীরা ছুটােছুটি করছেন। কিন্তু কূটনীতির কূট প্রভূরা নীরব নিথর। আইনের দৃষ্টিতে তিনি পাকিস্তানের নাগরিক, যে নাগরিকত্ব তিনি ঘৃণাভরে ছুড়ে ফেলেছেন তাঁর আর আর সহকর্মীদের সাথে। কিন্তু, তথাকথিত সভ্য জগতের আন্তর্জাতিক আইনের কীটদষ্ট পুস্তকের ভাষ্য তাঁর অনুকূলে নয়। সাড়ে সাত কোটি স্বজাতির সাথে একাত্ম হয়ে যে পৃথক জাতীয় সত্তার গৌরব মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছেন তিনি, তার স্বীকৃতি মেলেনি সভ্যতার মুরববীদের কাছে। অতএব, পাকিস্তানী বন্দীশালায় নিষ্ঠুরতম মৃত্যুকেও যদি বরণ করতে হয়ে তাঁকে, কুটনীতির ঠাণ্ডা মস্তিস্কের কসাইদের কাছে তার বুঝি কোন প্রতিকারই পাওয়া যাবে না। জনাব হোসেন আলীর অপরাধ তিনি তাঁর লক্ষ লক্ষ স্বদেশবাসীর দুঃখ যন্ত্রণার দিকে চোখ বুজে থাকতে পারেন নি। নয়াদিল্লীর পাকিস্তানী দূতাবাসটির অভ্যন্তরে দিনের পর দিন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের ভবিষ্যত মাথায় করে সর্বস্বান্ত স্বদেশবাসীর পাশে এসে দাঁড়াতে চেয়েছেন। নয়া দিল্লীর দূতাবাসে তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে সমাসীন। পাকিস্তানী জঙ্গী চক্রের ষড়যন্ত্রের গোপন তথ্যাবলী তাঁর জানা থাকার কথা। সম্ভবতঃ সেই কারণেই ইয়াহিয়া চক্র ক্ষেপা কুকুরের মত তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু ইয়াহিয়া চক্রের জিন্দানখানায় হোসেন আলী একা নন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আজ পাকিস্তান নামক বন্দীশালায় এমনিভাবে অত্যাচারের অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন। তাঁদের সবার পিঠেই আঘাতের চিহ্ন, সবার বুকেই বিক্ষোভের আগুন, সবার চোখেই ঘৃণার বিচ্ছুরণ। তাদেরও অপরাধ তারা ইয়াহিয়ার পাকিস্তানের নাগরিকত্বে পদাঘাত হেনে নয়া নাগরিকত্বের সদস্য ঘোষণায় কণ্ঠ দিয়েছে। দুনিয়ার মানুষ জেনে রাখুক, সাড়ে সাত কোটি হোসেন আলী প্রিয়তম স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য এই মৃত্যুযন্ত্রণাকে বরণ করেই নিয়েছে। এই যন্ত্রণার এই নিপীড়নের আগুনে পুড়েই সোনার বাংলা সোনার চেয়েও খাটি’ হয়ে উঠেছে। অত্যাচারেই বাংলার উন্মেষ। অত্যাচারই বাঙালীর ঐক্যের ভিত। অতএব, মাভৈঃ হোসেন আলীর মুক্তির আর বিলম্ব নেই!