পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

404 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ শত্রুশিবির- দেশ বাংলা ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা শত্রশিবিরে ভুট্টোর উভয় সংকটঃ ইয়াহিয়ার (রাজনৈতিক ভাষ্যকার) গত ১২ই নভেম্বর করাচীতে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে পাকিস্তান পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ইয়াহিয়া খানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের উপনির্বাচনের বিজয়ীদের নিয়ে সরকার গঠন করা হলে ৪০ দিনের মধ্যেই আমরা তা উল্টে দেবো। সংবাদটি পরিবেশন করেছেন রয়টার। পিকিং ফেরত ভুট্টোর পশ্চিম পাকিস্তানে বক্তৃতা সফরের এটি ছিল শেষ সভা। বাংলাদেশের ৭৮ জন গণপ্রতিনিধিকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাঁদের আসনের উপনির্বাচনের ব্যবস্থা হয়েছে। ছয়টি দক্ষিণপন্থী দল জোট বেঁধে সব কটি আসন নিজেদের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে এবং ইয়াহিয়া সরকারের পরোক্ষ সমর্থনে তাদের সফল হবার সম্ভাবনাই বেশী। ইতিমধ্যে ৫২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই ছয় দলের জোটের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে ৩টি আসন পি.ডি.পি’র জনৈক নেতা ভুট্টোর কাছে বিক্রী করে দিয়েছেন। বাকী ২০টি আসনের ব্যাপারেও চাপাচাপি চলছে। ইয়াহিয়ার এক নয়া নির্দেশে নির্বাচনের ৪দিন পূর্ব পর্যন্ত যে কোন প্রার্থীকে সরে দাঁড়াবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রার্থীদের উপর সামরিক বাহিনীর কর্তাদের চাপ দেওয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে নিশ্চিত ফলা ফলের সম্ভাবনা রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যদি একটি আসনেও নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন না হয় তবে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। ভুট্টো এক্ষেত্রে খুবই বেকায়দায় পড়েছেন। উপনির্বাচনের বিরুদ্ধে যাওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। অথচ এই উপনির্বাচন তাঁর মেজরিটি দলের নেতা হবার সুযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে, চোখের সামনে তা দেখেও তিনি কিছু করতে পারছেন না। নুরুল আমীনের নেতৃত্বে ডানপন্থীরা একজোট হয়ে ভুট্টোকে কোণঠাসা করে রাখতে চাইছে। উপনির্বাচনের পর এই দক্ষিণপন্থী জোটই ইয়াহিয়ার তথাকথিত পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে এবং নূরুল আমীনের সেই জোটের নেতা হিসাবে সরকার গঠনে আমন্ত্রিত হবার সম্ভাবনাই বেশী। ক্ষমতালি সু ভুট্টো তা, মেনে নেবেন কেমন করে ? ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত হয়ে ভুট্টো পিকিং গমনের পাশাপাশি নুরুল আমীনের পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যাপক সফর এবং ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারদৃষ্টে একথা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, ইয়াহিয়া-ভুট্টো-নূরুল আমীন সমঝোতা স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এই তিনজনের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ- বাটোয়ারা ছাড়া আর কোন ব্যাপারেই সমঝোতার প্রশ্ন ওঠে না। তিনজন তিনটি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার প্রতিভূ। কাজেই এদের মধ্যে মিল-অমিল-মিল নাটকীয়তায় অবাক হবার কিছু নেই।