পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

461 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ পাকিস্তানী চণ্ডচক্রের নায়ক ইয়াহিয়া অভিযান ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা পৃথিবীর এক একটি রাষ্ট্র অথবা জাতিকে ধ্বংসের জন্য একটিমাত্র শক্তিদপী মূখের প্রয়োজন এ যুগের তেমন একটি মূৰ্খ পাকিস্তানী চণ্ডচক্রের চণ্ডতম নায়ক ইয়াহিয়া দখলীকৃত বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল মুক্ত করার জন্যে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানী ঘাতক বাহিনী ধীরে ধীরে পিছু হটে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের প্রতিটি সীমান্তে একের পর এক এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসছে। প্রায় আট মাসে নির্যাতন শিবিরতুল্য দখলীকৃত এলাকায় অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পশু শক্তি হাতে নৃশংসভাবে উৎপীড়িত বাঙালী নারী-পুরুষ। তাঁরা আশা করছেন আর কতদিনে দখলীকৃত গোটা বাংলাদেশ পাকিস্তানী দুশমনের কবল মুক্ত হবে। আমরা জানি সেদিনের খুব বেশী আর বিলম্ব নেই- কয়েক সপ্তাহেরই মাত্র ব্যবধান। এই উজ্জ্বল বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়েও কিন্তু পাকিস্তানী জঙ্গীচক্রের আস্ফালন কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। তাদের প্রচারণার সুর এবং বক্তব্যেও কিছুমাত্র তারতম্য ঘটেনি। সেই একই বস্তাপচা অজুহাত ভারতীয় চক্রান্ত এবং ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী। লক্ষাধিক সুশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধার হাতে বস্তুতঃ গোটা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মুক্তিযোদ্ধার হাতে বেধড়ক মার খেয়েও ইয়াহিয়া চক্র তা স্বীকার করতে পারছে না। কারণ খেলা শেষ হয়েছে এই সত্য মেনে নেবার আগে মুখ রক্ষার মত একটা বিরাট অজুহাত সৃষ্টি করতেই হবে তাদের। তাই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাপক যুদ্ধেরই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীনা প্রতিনিধিদলের ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে ইয়াহিয়া খাঁ যে কথাগুলি বলেছে তা থেকেও সে কথাই প্রমাণ হচ্ছে। ইয়াহিয়া বলেছে, “দিন পাঠানো মৈত্রী প্রস্তাব উপেক্ষিত হওয়ায় ক্রুদ্ধ ইয়াহিয়া বলেছে “ওই মেয়ে মানুষটা যদি মনে করে থাকে আমাকে ভয় দেখিয়ে ঘায়েল করা যাবে তাহলে সে জেনে রাখুক, আমি সে পাত্র নই”। (আমরা বরাবর লক্ষ্য মানুষটি, ওই মেয়ে মানুষটি সূচক অশালীন বিশেষণেই চিহ্নিত করে। তার মত অমার্জিত লোকের মুখে হয়ত সেটাই শোভা পায়। কিন্তু তার পক্ষে এটাও ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় যে বাংলাদেশ প্রশ্নে শ্রীমতি গান্ধী ভারতের ষাট কোটি মানুষের মুখপাত্র। তাহলে শ্রীমতি গান্ধীর নাম উল্লেখেও তেলেবেগুনে জুলে ওঠার কারণটি কি এই যে ভদ্রমহিলার সামনে তার মত একজন জবরদস্ত জঙ্গী জেনারেল কোন রকমেই হালে পানি পাচ্ছে না। ফলে ধিকৃত পৌরুষের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে সাধারণ সৌজন্য এবং ভদ্রতার লেবাস ফেলে দিয়ে ইয়াহিয়া খাঁ গোটা বিশ্বের সামনে আমন প্ৰগলভ হয়ে উঠেছে ?