পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

27 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনা - সংবাদপত্র --- তারিখ বাংলাদেশ প্রশ্নে বিশ্ব- জয় বাংলা ১৯ মে, ১৯৭১ শক্তিবর্গের নিস্ক্রিয়তা ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা মানবতার ক্রন্দনরোলে কাঁপছে আল্লাহর আরশ কিন্তু কুম্ভকৰ্ণদের ঘুম ভাংবে কবে? থোক থোক রক্তের উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে স্বাধীন গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এই শিশু ও নবগঠিত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য, নির্মুল করার জন্য নরঘাতক জঙ্গী ইয়াহিয়া লেলিয়ে দিয়েছে তার হয়নাদের সবুজ বাংলার শ্যামল প্রান্তরে। চলছে নির্বিচারে গণহত্যা, শিশু, নারী, বৃদ্ধ, যুবক-যুবতী কোন ভেদাভেদ নেই। অবলীলায় ধ্বংস করছে সভ্যতার পীঠস্থান শিক্ষাঙ্গনকে, মাড়িয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে মসজিদ হামলার মর্মম্ভদ ঘটনাকে চাপা দেওয়ার জন্য বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকদের করছে নিধন, ভস্ম করে দিয়েছে স্বাধীন সংবাদপত্র অফিসগুলো। সারা বাংলাদেশ আজ রণক্ষেত্র। বাংলার মাঠে জুলছে আগুন বাতাসে তার রূঢ়তা, আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর চারদিকে ভীত, বিহবল ও আতঙ্কগ্রস্ত অসহায় মানুষের চিৎকারে বাংলাদেশ হয়ে পড়েছে প্রেতপুরী। মানবতার এহেন অবমাননায় আল্লাহর আরশ হয়তো থর-থর করে কাঁপছে কিন্তু বিশ্বমানবতার এবং শান্তির সোল এজেন্ট জাতিসংঘের বৃহৎ রাষ্ট্রবর্গের ঘুম ভাঙছে না, বিবেক দংশিত হচ্ছে না। উথান্ট সাহেব কি জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের কথা ভুলে গিয়েছেন? না শুধু বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থ জড়িত না থাকলে তাঁর কষ্ঠে শান্তির ললিতবাণী বেরোতে বাধে? শুধু বিনয়ের সাথে উথান্ট সাহেবকে জানাতে চাই বাংলাদেশে যে মানবনিধন যজ্ঞ চলছে তা পাকিস্থানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়। এ যুদ্ধ একটি স্বাধীন জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধ-তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করুন, সিদ্ধান্ত নিন। যাতে জাতিসঙ্ঘের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে না ফেলে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শক্তি আমেরিকা আজ নীরব। নীরব নিক্সনের কষ্ঠ। কিন্তু কেন? তিনিও কি ভাবেন এটা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই নাক গলানোর প্রয়োজন নেই? কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় নাক গলাতে তো তারা কোন পাত্রাপাত্র, স্থান, কাল বিচার করে না-তবে এখানে কেন এত চিন্তা এত ভাবনা। ফুলব্রাইট এবং এডওয়ার্ড কেনেডির মত প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ যখন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের দাবী জানিয়েছেন, তখনও নিক্সন কোন কোন ব্যবস্থা করছেন না? আমেরিকার পত্র পত্রিকাও মানবতার এই ক্ৰন্দন বেদনায় ভারাক্রান্ত, বিহবল। কিন্তু নিক্সন সাহেব কি বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার ব্যাপারে নিজের এবং তাঁর সরকারের দায়িত্ব এড়াতে পারেন? তাঁর জানা উচিত বাংলাদেশে আজ যা ঘটছে তাতে তিনি মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন না। নিক্সন সরকারের পক্ষ থেকে বলা যেতে পারে যে, ইয়াহিয়া জঙ্গীচক্র কমিউনিষ্ট চীনের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রদত্ত মার্কিন অস্ত্র-শস্ত্র তাদের অনুমতি ব্যতিরেকেই বাংলাদেশে নরমেধযজ্ঞে ব্যবহার করছে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও কি তাদের কিছু করণীয় ছিল না বা নেই? তাঁরা কি চুক্তিভঙ্গের অজুহাতে পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ পারতেন না? আসল কথা হলো ক্ষমতাসীন মার্কিন সরকারের গণতন্ত্র ফাঁকি। দেশে দেশে একনায়কত্ববাদীদের ফাঁকি। দেশে দেশে একনায়কতুবাদীদের পোষণের যে নীতি মার্কিন সরকার অনুসরণ করে আসছে পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কেন না, মার্কিন সরকারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য না পেলে পাকিস্তানের সামরিক চক্র বাংলাদেশে একদিনও যুদ্ধ চালাতে পারে তা আমাদের বিশ্বাস হয় না। মার্কিন সরকারের জেনে রাখা উচিত বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাদের অস্তিতু বজায় রাখার