পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

35 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় জয় বাংলা ২৫ জুন, ১৯৭১ এরই নাম কি স্বাভাবিক অবস্থা? ১ম বর্ষঃ ৭ম সংখ্যা এরই নাম কি স্বাভাবিক অবস্থা? মিথ্যার শত জাল বুনেও সত্যকে কোনদিন ঢেকে রাখা যায় না। স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বিশ্ব মানবতার কাছে আজ একটি মহাসত্য। এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাড়ে সাত কোটি মানুষ ত্যাগ, তিতিক্ষা, শৌর্যবীৰ্য্য ও আত্মদানের যে নজীর স্থাপন করেছে তা মানব ইতিহাসে চিরদিন ভাস্বর থাকবে। অথচ এই মহাসত্যটিকে মুছে ফেলার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে জল্লাদ ইয়াহিয়া খান প্রথম থেকে একের পর একটি মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে পৃথিবীর মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার কত কোশেশই না করে এসেছে। সত্যের কাছে মিথ্যা পরাজিত হবেই। তাই ইয়াহিয়া খানের ধোঁকাবাজীও বিশ্ব-মানবতার কাছে হার মানতে বাধ্য। সাড়ে ৭ কোটি বাঙালী জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তথা সর্বতোভাবে নিশ্চিহ্ন করার মানসে নজিরবিহীন নৃশংস গণহত্যা, ব্যভিচার, লুন্ঠন প্রজুলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে প্রায় ১০ লক্ষ নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ সর্বহারা বাস্তুত্যাগী হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং দুই কোটিরও অধিক বাঙালী বাংলার গ্রাম গ্রামান্তরে আশ্রয়ের আশায় অনিশ্চয়তার পিছনে পিছনে ঘুরছে। শুধু তাই নয়, গুটিকয়েক শহর ও বন্দর এবং মুষ্টিমেয় এলাকায় হানাদার বাহিনীর আধিপত্য সীমাবদ্ধ থাকলেও বাংলার ৬৪ হাজার গ্রামের প্রায় ৪ কোটি পরিবারের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রাম ও পরিবার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আজ জল্লাদ ইয়াহিয়ার নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচারের শিকারে পরিণত হয়েছে। অথচ সম্পূর্ণ ব্যাপারটিকে ঢেকে রাখার জন্য পৃথিবীর মানুষকে অপপ্রচারের মাধ্যমে এ কথাই বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, বিষয়টি একান্ত ভাবেই পাকিস্তানের ‘ঘরোয়া ব্যাপার। কিন্তু, সাড়ে সাত কোটি মানুষের করুণ ফরিয়াদে বিশ্বের দরবারে এই সত্যটি আজ প্রকাশ্য দিবালোকের মত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ইয়াহিয়া খানের কাছে যা ঘরোয়া ব্যাপার, মানব ইতিহাসে সেটা জঘন্যতম কলঙ্ক। কখনো ইসলামের ব্যবসা করে, কখনো তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত রাজ্যে অখণ্ডতার নামে, আবার কখনো সাম্প্রদায়িকতার জঘন্যতম অপপ্রচার করে বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের শাশ্বত সত্য প্রাণের চেয়েও প্রিয় যার জন্য প্রতিটি বাঙালী যে কোন ত্যাগকে হাসিমুখে গ্রহণের জন্য সদা প্রস্তুত সেই স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কত কৌশলই না করেছে। কিন্তু সূর্যের আলো থেকে আসন্ন হচ্ছে। আজ সার্বভৌম বাংলাদেশ যেমন মহা সত্য, তথাকথিত পাকিস্তানের অনলুপ্তিও তেমনি একটি সত্য। ব্যক্তিবিশেষ কিংবা গোষ্ঠীবিশেষের স্বার্থীন্ধতা ও হঠকারিতা এবং ভুলের মাশুল হিসাবেই এই অবলুপ্তি ঘটেছে, একথা আমরা পূবেই বলেছি এবং পৃথিবী তা স্বীকার করেছে। কারণ, মৃত পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিতে পৃথিবী আজ নারাজ। এর কোন বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে না। কনসোর্টিয়াম বৈঠক থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি সাহায্যকারী দেশ অভিমত প্রকাশ করেছে ইয়াহিয়ার পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারটি’ আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত সাহায্য দেওয়ার প্রশ্নটি স্থগিত রাখাই বাঞ্ছনীয়। এ রকম অভিমত প্রকাশের পিছনে অবশ্য একটি গৃঢ় রহস্য আছে। সাহায্যকারী দেশ ভালভাবেই জানেন যে, বাংলাদেশ আর ইয়াহিয়া খানের মৃত পাকিস্তান এক নয়। আর বাংলার পাট, চা, তামাক এবং