পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

53 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড পাঞ্জাবী ও আরো কয়েকটি রেজিমেন্ট থেকে বাছাই করা পাঁচ শত অস্বাভাবিক চরিত্রের সেনাকে পাঠানো হয় আমেরিকায় হত্যা বিশেষজ্ঞদের ট্রেনিং লাভ করতে। এই ব্যবস্থাকে এতোই গোপনে করা হয়েছিল যে, ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট দুরের কথা, অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাপ্রধানও তা জানতেন না। এই সমস্ত হত্যা ও ধ্বংসের সেনাদের সমন্বয়ে যে হত্যাকারী নরপিশাচের দল গঠন করা হয়, তার নাম “স্পেশাল ফোর্স”। দশজনের এক একটি দল করে তাদের পঞ্চাশটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। আমেরিকার উত্তর ক্যারোলিনাস্থ “ফোট ব্র্যাগ” এ মার্কিন স্পেশাল ফোর্স ট্রেনিং ক্যাম্পটিতে এই ধরণের বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত হত্যা বাহিনী তৈরী করা হয়ে থাকে। ইয়াহিয়ার স্পেশ্যাল ফোর্স প্রথমে এ “ফোট ব্র্যাগ” ব্র্যাগ” আর ‘কাকুন থেকে বিশেষভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত হত্যাকারী বাহিনীই হচ্ছে তাদের “গ্রীন ব্যারেট।” জনৈক বিদেশী সাংবাদিকের তথ্য অনুযায়ী, অতীতে ও বর্তমানে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হত্যা বিশেষজ্ঞগণ ংলাদেশে নরহত্যা ও ধ্বংসের অবিশ্বাস্য অভিযানে যুক্ত রয়েছে। কাকুন গুপ্ত শিবিরে এদের তিন সপ্তাহ ট্রেনিং দেয়া হয়ে থাকে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত জল্লাদদের সংখ্যা দিন দিনই এতো বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ভবিষ্যতের দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে পশ্চিম পাকিস্তানের কোন “বিদ্রোহ স্থানে’ এদের পোষ্ট করার ব্যবস্থা হয়েছে। ২৫শের রাত্র থেকে মেজর জেনারেল মিঠার উপর দায়িত্ব পড়েছিল ইয়াহিয়ার গেরিলা বাহিনীর। আর রক্তপিপাসু “স্পেশাল বাহিনী” তারই সামগ্রিক নেতৃত্বের আওতায় আসে। এ রাত্র থেকে এবং পরবর্তীকালে এই বাহিনীই ইয়াহিয়ার গণহত্যার পরিকল্পনা কার্যকরী করেছে। কিন্তু সেই স্পেশাল বাহিনীর রক্ত লালসা শেষ হবার পূবেই তারা নিজেদের রক্ত প্রবাহ দেখে আৎকে উঠেছে। আর নিজের সঙ্গীর মৃতদেহের পাশে দাড়িয়ে শিউরে উঠেছে পরবর্তী ভয়াবহ মুহুর্তের কথা ভেবে। ভিয়েতনামে যেমন “গ্রীন ব্যারেট” দের পালিয়ে যেতে হয়েছে, বাংলাদেশের মাটিতে ঠিক তেমনিভাবে ইয়াহিয়ার “স্পেশাল বাহিনীকে বিলীন হয়ে যেতে হচ্ছে নৃশংস হত্যা আর ধ্বংসের শিকার দেশপ্রেমিক সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যেকটি রক্তকণিকা থেকে আজ জন্ম নিচ্ছে জন্ম নিচ্ছে মুক্তি সেনা। তাদের দুর্জয় অভিযানের মুখে তাদের প্রতি আক্রমণের তীব্রতার ঝলকে হত্যাকারী হায়নাদের জীবনে বিভীষিকার হাতছানি। মৃত্যু, উচ্ছেদ আর পরাজয়ের কালিমা তাদের আজ কলঙ্কিত ইতিহাসের ধিকৃত জীব বলে চিহ্নিত করেছে।