পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

104 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্ট বলেন যে, পাকিস্তানে যাঁরা ফিরে আসছেন, তাদের অধিকাংশই অনুমোদিত পথ দিয়ে আসতে পারছেন না, কারণ ভারত তাদের ফিরতে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন যে, এ সমস্ত বাস্তুচু্যত ব্যক্তি অনুমোদিত পথে পাকিস্তানে ফিরে আসছেন। প্রেসিডেন্ট বলেন যে, ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক বাস্তচু্যত ব্যক্তি পূর্ব পাকিস্তানের তাদের বাড়ীঘরে ফিরে এসেছেন এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ জন হচ্ছে হিন্দু। প্রেসিডেন্ট বলেন যে, ভারত বাস্তচু্যতদের যে সংখ্যা দাবী করছে তা সম্পূর্ণ ভুল। তিনি বলেন যে, ভারত সীমান্ত এলাকায় যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, তা বাস্তুচু্যতদের ফিরে আসার ব্যাপারে বাধা স্বরুপ। তিনি বলেন যে, যদি ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে তাহলে বাস্তুচ্যুতদের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে এবং বাস্তুচ্যুতরা নিরাপদে তাদের বাড়ঘরে ফিরে আসতে পারবেন। নিরাপত্তার অভাবে জনগণের এখনো পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে যাওয়ার বিষয় প্রেসিডেন্ট সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাত থেকে দেশের পূর্বাঞ্চলের সাত কোটি জনগণকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন যে, বে-আইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ এই বিদ্রোহের উস্কানী দিয়েছিল। তিনি বলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বন্ধ হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর কোনরুপ গণহত্যা চালানোর খবরকে প্রেসিডেন্ট সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে বর্ণনা করেন। ভারতে পালিয়ে যাওয়া বে-আইনী ঘোষিত আওয়ামী সদস্যগণ কর্তৃক মিথ্যা কাহিনী রটনার ফলে এই ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে মুজিবুর রহমানের কোটারী ও বে-আইনী ঘোষিত আওয়ামী সদস্যরাই তাদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারীদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে। তিনি বলেন যে, সীমান্তের ও-পারের বন্ধুদের উস্কানীতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে হত্যা, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রেসিডেন্ট বলেন যে, একটি রাজনৈতিক সমাধানের আশায় তিনি ধৈৰ্য্যের সঙ্গে এ সমস্ত সহ্য করছিলেন। কিন্তু তিনি যখন শেখ মুজিবুর রহমানের একগুয়েমী সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হলেন, তখন সশস্ত্র বাহিনীকে সরকারের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং বিপদাপন্ন জনগণের জীবন রক্ষা করার নির্দেশ দিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ পূর্ব পরিকল্পিত থাকার বিষয় প্রেসিডেন্ট অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে, যদি এই ব্যবস্থা পূর্ব পরিকল্পিত হতো তাহলে আওয়ামী লীগের এত বেশীসংখ্যক সদস্য ভারতে পালিয়ে যেতে পারতেন না। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর নির্যাতন চলার বিষয়ও প্রেসিডেন্ট অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে, হিন্দুরা যদি পূর্ব পাকিস্তানে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেই থাকে তবে সীমান্তের ওপারের চক্রান্তের ফলেই তারা এরুপ বোধ করছে। স্বচক্ষে সবকিছু দেখার জন্য প্রেসিডেন্ট বিদেশী সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তানে সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট একজন সাংবাদিককে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে অভু্যুত্থান চলাকালে আড়াই লাখ লোককে হত্যার খবর অত্যন্ত অতিরঞ্জিত।