পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

386 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড (৬) পীর মহসিনউদ্দিন- পূর্ব পাকিস্তান জমিয়াতে উলেমায়ে ইসলামের সভাপতি; এবং (৭) মিসেস আমেনা বেগম- পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগের উধ্বতন সহ-সভানেত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী। ১৯৭০ সালে এরা এবং অন্যান্য নেতারা জনগণের উদ্দেশ্যে তাঁদের বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের জবরদস্তি মূলক পদ্ধতি, জনসভা পণ্ড করে দেওয়া, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর দৈহিক আক্রমণ এবং পার্টির দফতর লুট ও বিনষ্ট করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই সমালোচনা দিন দিন বাড়তেই থাকে। কিন্তু পাছে নির্বাচন অভিযানে সরকার হস্তক্ষেপ করেছেন বলে মনে করা হয়, এ জন্য সরকার এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। ঢাকার পুরানা পল্টন ময়দানে ১৯৭০ সালের ১৮ই জানুয়ারী পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য একটি দলের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভা জনতা কর্তৃক আক্রান্ত হয়। ফলে, একজন লোক নিহত এবং পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। জামাত-ই-ইসলামী এই সভার আয়োজন করেছিলো। জামাত-ইইসলামী প্রমাণ করেছিলো যে, “ময়দানে ঢুকে যারা শ্রোতাদের উপর হামলা চালিয়েছিলো, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ছিলো এবং গুণ্ডাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র এবং হাতবোমা ছিলো।” ঢাকার দৈনিক পত্রিকা পাকিস্তান অবজারভার এ ঘটনাকে নিন্দা করে ১৯৭০ সালের ২০শে জানুয়ারী প্রকা করে যে, “সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে দলে দলে লোকের পুনরাগমন, সভা পণ্ড করা, মঞ্চ পুড়িয়ে ফেলা এবং কয়েক হাজার শ্রোতাকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটা প্রমাণ করে যে, এটা একটা সুপরিকল্পিত এবং সংকল্পবদ্ধ প্রচেষ্টা। তা না হলে এতো অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু বিনষ্ট করা সম্ভব হতো না।” যারা হিংসাত্মক কার্যকলাপের আশ্রয় নেয় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তাদের নিন্দা করেন এবং সতর্ক করে দিয়ে বলেনঃ- রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যদি কেউ হিংসাত্মক কার্যকলাপের সাহায্য নেয়, তাহলে মনে করা হবে যে সে জনসাধারণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি করছে। সুতরাং তাকে জনমতের সামনে জবাবদিহি করতে হবে।” তিনি আরো বলেনঃ যারা হিংসাত্মক কার্যকলাপ দিয়ে তর্কের মীমাংসায় পৌছুতে চায়, তারা যে শুধু তাদের দাবীর প্রতি বিশ্বাসের অভাব প্রমাণ করে তাই নয়, গণতন্ত্রের প্রতিও তাদের আস্থার অভাব প্রমাণ করে- একথা তারা যতোই অস্বীকার করুক না কেনো। এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামে আর একটি দলের একটা জনসভায় মারপিট হয়। ১৭ জন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যুক্ত এশতেহারে এর নিন্দা করে বলেন, “কিছু সংখ্যক দুস্কৃতিকারী এবং গুণ্ডারা সুসংবদ্ধভাবে ১৯৭০ সালের ২১শে জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত জনসভা পণ্ড করে দেবার চেষ্টা করে।” সেই একই দিন (২১শে জানুয়ারী ১৯৭০) পৃথক একটি যুক্ত বিবৃতিতে এই নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগকে গুণ্ডামী এবং সন্ত্রাসনীতি অবলম্বন করার জন্য বিশেষভাবে দোষারোপ করেন। ১৯৭০ সালের ২২শে জানুয়ারী ঢাকায় জামাত-ই-ইসলামীর দফতরে হামলা করা হয়। পার্টির জেনারেল সেক্রেটারী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, আমাদের দফতরে হামলা চালানোকালে আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত গুণ্ডারা দরজা ভেঙ্গে ঢুকে আসবাবপত্রাদি ভেঙ্গে তছনছ করে, সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলে এবং পার্টির কাগজপত্র, দলিল, এবং পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়।” ১৯৭০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী ঢাকায় পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এক জনসভায়ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে। তারা ‘জয় বাংলা স্লোগান দেয়। গোলযোগের মধ্যে নিজাম-ই-ইসলাম পার্টির নেতা, মৌলবী ফরিদ আহমদ প্রমুখসহ কিছু লোক আহত হন। পিডিপির প্রেসিডেন্ট মিঃ নুরুল আমীন এক বিবৃতিতে বলেনঃ আওয়ামী লীগের এসব কার্যকলাপের নিন্দা করার মতো