পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

393 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড দ্বিতীয় অধ্যায় সংকট ঘনীভূত হলো ১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা ছিলো এইঃ (১) আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যকলাপের দরুন আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে বিশৃংখল হয়ে পড়েছিলো। (২) ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ছাড়াও, আওয়ামী লীগের হিংসাত্মক কার্যকলাপ আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ালো। ভিন্নমত পোষণকারীদের তারা আক্রমণ করলো। ৩রা মার্চ চট্টগ্রামে ও ৫ই মার্চ খুলনায় আক্রমণের ফলে শত শত লোক হতাহত হলো। (৩) শেখ মুজিবুর রহমান কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারকে প্রকাশ্যভাবে চ্যালেঞ্জ করে, একের পর এক এমন কতকগুলো নির্দেশ জারী করলেন, যার ফলে প্রশাসন, যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হলো। (৪) পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় সীমান্তে হিন্দুস্তানী সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি পেলো। এই শ্বেতপত্রের পরবর্তী অধ্যায়ে এই ঘটনাবলীর বিশদ বিবরণ দেওয়া হলো। শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ৪ দফা দাবী তার বিচ্ছিন্নতার স্পষ্ট অভিপ্রায়কে আরও স্পষ্টতর করলো। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আর একদফা শাসনতান্ত্রিক আলোচনা জন্যে ১৫ই মার্চ ঢাকা গেলেন। শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ৪ দফা দাবী ছিলো এইঃ (১) অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করা: (২) অবিলম্বে সব সৈন্যবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া; (৩) প্রাণহানি সম্পর্কে তদন্ত, এবং (৪) জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর (জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের পূর্বেই)। এখানে উল্লেখযোগ্য যে আওয়ামী লীগ নেতা কিন্তু এমন কোন আশ্বাস দেননি যে এই দাবীগুলো মেনে নিলেই তিনি ২৫শে মার্চ তারিখে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আহুত জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগ দেবেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেনঃ এই শর্তগুলো গ্রহণ করা হলে, তখন আমরা বিবেচনা করে দেখবো যে আমরা অধিবেশনে যোগ দেবো কিনা।” ১৬ই মার্চ ১৯৭১ শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্টের সংগে সাক্ষাৎ করলেন এবং তার ৪ দফা দাবী পেশ করলেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগ “হাই কমান্ড”-এর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হলেন। সেইদিনই তিনি একটি বিবৃতি দিলেন। তাতে “পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি গৃহকে এক একটি দুর্গে পরিণত করার জন্য” পুনরায় আহবান জানানো হলো। ১৭ই মার্চ, ১৯৭১ প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের সংগে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে মিলিত হলেন। প্রেসিডেন্ট বললেন, যথাসম্ভব শীঘ্ৰ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মত তিনি সর্বদাই পোষণ করে আসছেন।