পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

404 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড তৃতীয় অধ্যায় পূর্ব পাকিস্তান সন্ত্রাস রাজনৈতিক কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাদের প্রস্তুতিও সমাপ্তির পথে নিয়ে যাচ্ছিল। যা তারা শাসনতান্ত্রিক পন্থায় পেতে ব্যর্থ হতে পারে, তাকে জোর করে আদায় করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। নির্বাচনে সন্ত্রাসবাদীদের কলাকৌশলের সাফল্য শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর দলের সাহস বাড়িয়ে দিলো। তারা বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থাকে বানচাল, ছাত্রসমাজকে উত্তেজিত এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাঙালীদের দলভুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু করলেন। বিভিন্ন শহরে “সংগ্রাম পরিষদ’ গড়ে উঠলো এবং কলেজের প্রাঙ্গণসমূহ সন্ত্রাসীবাদীদের শিক্ষা শিবিরে পরিণত হলো। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী এবং সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন এবং আন্দোলন শুরু করা হলো। বহু পূর্ব থেকেই অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকার আওয়ামী লীগ সমর্থক দৈনিক “দি পিপল’ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্টের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, তিনি প্রকাশ্যেভাবেই মুক্ত ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী। এইভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সব প্রস্তুতি নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ করলেন এক অরাজকতার আন্দোলন। এরপর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ শুরু করলো এক সন্ত্রাসের রাজত্ব। ১লা মার্চ, ১৯৭১ এক সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় এক ধর্মঘট আহবান করলেন। তাঁর ধর্মঘট আহবানের পর পরই আওয়ামী লীগের চরমপন্থীরা শহরের বিভিন্ন এলাকা লুটতাজ, অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য বর্বরোচিত কার্যকলাপে মেতে উঠলো। তারা নারায়ণগঞ্জে রাইফেল ক্লাব আক্রমণ করে সব অস্ত্রশস্ত্র লুট করে নিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলে সশস্ত্র দল গড়ে উঠলো- তাদের কাজ ছিল শহরে ছড়িয়ে পড়ে অস্ত্রশস্ত্র, গাড়ী এবং অর্থ সংগ্রহ করা। ১লা মার্চ তারিখের রাত্রে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র হিংসাত্মক কার্যকলাপের তীব্রতা ও সংখ্যা বেড়ে গেলো। ২রা মার্চ, ১৯৭১ বায়তুল মোকাররমে দুটি এবং নিউ মার্কেটে একটি অস্ত্রের দোকান লুট করা হলো। লুষ্ঠিত অস্ত্রশস্ত্রলো তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। আগেই সেখানে একটি “গুলী চালানোর অনুশীলন কেন্দ্র” খোলা হয়েছিল, সেখান থেকে সারা দিন গুলী ছোড়ার আওয়াজ শোন যেতো। রাস্তায় জনতা পাকিস্তানবিরোধী শ্লোগান দিয়ে হাতে বন্দুক, লোহার ডাণ্ডা, এবং লাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। জিন্নাহ এভিনুর ও বায়তুল মোকাররমের কয়েকটি দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শালিমার হোটেল এবং গুলিস্তান সিনেমা হল আক্রান্ত হলো। চালু রিক্সার উপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। নারায়ণগঞ্জে একটি পাটকল এবং ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় বেসরকারী আবাসিক গৃহে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ৩রা মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান আর একটি সাংবাদিক সম্মেলন সারা প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট পালনের আহবান জানান। তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীনই আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার অবমাননা করে এবং পুড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জবাব দেন “ আমার কোন মন্তব্য নেই”। তিনি আবার জোর দিয়ে বলেন যে,