পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

405 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড তিনি এক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করবেন। তিনি আরও ঘোষণা করেছিলেন যে, ৭ই মার্চের জনসভায় তিনি তার কার্য পরিকল্পনা প্রকাশ করবেন। ইতিমধ্যেই হিংসাত্মক কার্যকলাপ বাড়তেই থাকলো। বেসরকারী আইন রক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহরের ব্যাপক গোলযোগ আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ হলো। তাদের অনুরোধেই ব্যারাকে অবস্থিত সেনাবাহিনীকে ডাকা হলো এবং রাতে কারফিউ জারী করা হয়। ব্যাপকভাবে এই কারফিউ অমান্য করা হয়েছিল। সদরঘাটে একটা সেনা ইউনিটের উপর জনতার আক্রমণের ফলে ৬ জন নিহত হয়। সেনাবাহিনী যখন স্থানীয় টেলিভিশন ষ্টেশনটিকে এক বিক্ষুব্ধ জনতার কবল থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে তখন একজন লোক নিহত হয়। ৩রা মার্চ, ১৯৭১ ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী এবং নবাবপুরসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ার দরুন বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ৫ জন লোক নিহত এবং ৬২ জন লোক আহত হয়। বেশকিছুসংখ্যক দোকানাপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক গৃহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু শহরবাসীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। জিন্নাহ এভিনু্যয়ের উপর একটা জেনারেল স্টোর ও একটি ঘড়ির দোকান আক্রমণ করা হয়। অস্ত্রের দোকানগুলো থেকে আরও অস্ত্রশস্ত্র লুট করা হয়। গোটা পঞ্চাশেক ঘরে আগুনও ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে প্রদেশের অন্যান্য অংশে জনতার আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়েছে। যশোরে লাঠিসোটা বর্শায় সজ্জিত হয়ে জনতা স্থানীয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ আক্রমণ করে। টেলিফোন এক্সচেঞ্জের রক্ষীরা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলী ছুড়লে দুজন লোক নিহত এবং ৯ জন আহত হয়। সকল ভৈরব থেকে লাকসামগামী একটা স্থানীয় ট্রেন কুমিল্লায় থামিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। লাকসামের কাছে দৌলতগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জও হামলাকারীদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কুমিল্লা টেলিফোন এক্সচেঞ্জকে প্রদেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। আখাউড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার এক্সচেঞ্জগুলোকেও জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নির্দেশ মতো ঢাকার রেডিও এবং টেলিভিশন নতুন এক বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত প্রচার করতে শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ের নামে সারা প্রদেশব্যাপী এক অসহযোগ আন্দোলনে চালাবার কথা ঘোষণা করেন। ৪ঠা মার্চ, ১৯৭১ ১৯৭১ সালের ৩রা ও ৪ঠা মার্চ রাতে চট্টগ্রাম ও খুলনায় গোলযোগ ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অতর্কিত আক্রমণকারীদের দ্বারা পরিচালিত বিক্ষুব্ধ জনতা Wireless colony এবং শহরের অন্যান্য এলাকা আক্রমণ করে যথেচ্ছা লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, হত্যা এবং ধর্ষণ করেছিল। ফিরোজশাহ কলোনীতে ৭০০ ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সেখানকার অধিবাসী পুরুষ, মেয়ে ও শিশুদের পুড়িয়ে মারা হয়। যারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলো তাদের হত্যা কিংবা গুরুতররূপে আহত করা হয়। ৩রা ও ৪ঠা মার্চে যারা জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিল এবং যাদের ভস্মীভূত দেহ পরে পাওয়া যায়, তারা ছাড়াও ৩শ’র বেশি লোক হত্যা ও আহত হয়।