পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

574 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ১৯৯। ডোমারে জেনারেল নিয়াজী দৈনিক পাকিস্তান ৪ নভেম্বর, ১৯৭১ ডোমারে জেনারেল নিয়াজী – ভারত প্রদেশবাসীর শুভাকাঙ্ক্ষীর হতে পারে না পূর্বাঞ্চল কমাণ্ডের কমাণ্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ, এ, কে নিয়াজী বলেছেন, যে ভারত প্রতিদিন আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর উপর গোলাবর্ষণ করে বহু নিরপরাধ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করছে সে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না । এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, জেনারেল নিয়াজী গতকাল রংপুর জেলার নীলফামারীর উত্তরে ডোমারে শান্তি কমিটির সদস্যদের এক সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন । তিনি ঐ এলাকায় একদিনের সফর করেন। জেনারেল নিয়াজী রংপুর এবং লালমনিরহাটও সফর করেন। উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারগণ তাঁর সঙ্গে ছিলেন । জেনারেল নিয়াজী স্বাধীনতা- পূর্বকালে হিন্দু শাসনাধীনে উপমহাদেশের মুসলমানদের দুর্দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, ভারত আবারও এই প্রদেশকে তার পদানত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি ভারতের দুরভিসন্ধি সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে হুশিয়ার করে দেন এবং মুসলিম জাতি হিসেবে স্বাধীনতার মূল্য উপলব্ধি করার আহবান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, দাসত্বের জীবনযাপনের চেয়ে মাতৃভূমির জন্য মৃত্যুবরণ অনেক সম্মানজনক । ভারতের কথা ও কাজের মধ্যে অসঙ্গতির উল্লেখ করে জেনারেল নিয়াজী বলেন, একদিকে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্যে দরদ দেখিয়ে গর্ববোধ করছে, অপরদিকে আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর উপর প্রতিদিন অবিরাম গোলাবর্ষণ করে বহু নিরপরাধ নারীপুরুষ ও শিশুকে হত্যা করছে। তিনি আরো বলেন যে, ভারত অন্তর্ঘাতীদের ট্রেনিংদান ও অস্ত্রসজ্জিত করে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে জনগণের দুর্দশা বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই লাভ করছে না। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এই অংশের জনগণের জন্য ভারতের সমবেদনা দেখানোর কি এটাই পস্থা? জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের শত্রদের বিতাড়নে রংপুর জেলার জনগণের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন । এ ব্যাপারে তিনি রাজাকারদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখকরে বলেন যে, রাজাকাররা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্য মূল্যবান সেবা করে যাচ্ছে । তিনি বলেন, প্রত্যেক মুসলমান ইসলাম ও তাঁর মাতৃভূমির জন্য একজন নিবেদিত মুজাহিদ। এর আগে সেখানকার স্থানীয় কমাণ্ডার রাজাকার আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর তৎপরতার কথা জেনারেল নিয়াজীকে জানান । এরাও স্বতন্ত্রভাবে এবং নিয়মিত সৈন্যদের সঙ্গে একযোগে বিভিন্ন দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে । স্থানীয় কমাণ্ডার জেনারেলকে জানান যে, প্রধানতঃ রাজাকারদের সদা জাগ্রত থাকার দরুনই এই এলাকায় ভারতীয় চরেরা একটিও সেতু অথবা কালভার্ট ধ্বংস করতে পারেনি । সম্প্রতি ভারতীয় চরদের সঙ্গে সৈন্য ও রাজাকারদের বিভিন্ন সংঘর্ষে যেসব অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকদ্রব্য আটক করা হয় জেনারেল নিয়াজী তাও দেখেন । জেনারেল মোটরযোগে ডোমার ও লালমনির হাটেও যান । সেখানে রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ জনতা জেনারেলকে দেশাতুবোধক ধ্বনি দিয়ে অভিনন্দন জানায় ।