পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

যাবে তা হবে না: এখানে না বলে যাওয়ার প্রতিনিধি হচ্ছে তা, অতএব ‘সর্বনাম’। তা, তুমি বরং গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ো: এই ‘তা’ অব্যয় এবং অর্থহীন, না থাকলেও চলে। তব, মনে হয় একটুখানি ঠেলা দেবার জন্যে যেন প্রয়োজন আছে। তা, এক কাজ করলে হয়: একটা বিশেষ কাজের দিকটা ধরিয়ে দিল ঐ ‘তা’।

 ‘বুঝি’, সহজ অর্থ ‘বোধ করি’। অথচ বাংলা ভাষায় ‘বুঝি’ ‘বোধ করি’ ‘বোধ হচ্ছে’ বললে সংশয়যুক্ত অনুমান বোঝায়: লোকটা বুঝি কালা, তুমি বুঝি কলকাতায় যাবে। ‘তুমি কি যাবে’ এই বাক্যে ‘কি’ অব্যয়ে সস্পষ্ট প্রশ্ন। কিন্তু ‘তুমি বুঝি যাবে’ এই প্রশ্নে যাবে কি না সন্দেহ করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় ‘বুঝি’ শব্দে বুঝি ভাবটাকে অনিশ্চিত করে রাখে। বুঝির সঙ্গে ‘বা’ জুড়ে দিলে তাতে অনুমানের সুরটা আরও প্রবল হয়।

 যদি, যদি-বা, যদিই-বা, যদিও-বা। যদি অন্যায় কর শাস্তি পাবে: এটা একটা সাধারণ বাক্য। যদি-বা অন্যায় ক’রে থাকি: এর মধ্যে একটু ফাঁক আছে, অর্থাৎ না করার সম্ভাবনা নেই-যে তা নয়। যদিই-বা অন্যায় করে থাকি: অন্যায় করাটা নিশ্চিত বলে ধরে নিলেও আরও কিছ, বলবার আছে। যদিও-বা অন্যায় করে থাকি: অন্যায় সত্ত্বেও স্পর্ধা আছে মনে।

 ‘তো’ অব্যয়শব্দে অনেক স্থলে ‘তবু’ বোঝায়, যেমন: বেলায় এলে তো খেলে না কেন। কিন্তু, তুমি তো বলেই খালাস, সে তো হেসেই অজ্ঞান, আমি তো ভালো মনে করেই তাকে ডেকেছিলাম, তুমি তো বেশ লোক, সে তো মস্ত পণ্ডিত— এ-সব স্থলে ‘তো’ শব্দে একটু ভর্ৎসনার বা বিস্ময়ের আভাস লাগে, যথা: তুমি তো গেলে না, সে তো বসেই রইল, তবে তো দেখছি মাটি হল।

 ‘গো’ শব্দের প্রয়োগ সম্বোধনে ‘তুমি’ বর্গের মানুষ সম্বন্ধে, ‘তুই’ বা ‘আপনি’ বর্গের নয়: কেন গো, মশায় গো, কী গো, ওগো শনে যাও, হাঁ গো তোমার হল কী। সংস্কৃত ‘ভোঃ’ শব্দের মতো

১১৫