‘পেজোমো’ বলা চলে অনায়াসে, কিন্তু ‘সেধোমো’ (সাধুত্ব) বলতে বাধে। একটা প্রত্যয় দিয়ে বিশেষ ক’রে মনের ঝাল মেটাবার উপায় বোধ করি আর-কোনো ভাষাতেই নেই।
আর-একটা প্রত্যয় দেখো, পনা: বুড়োপনা ন্যাকাপনা ছিব্লেপনা আদুরেপনা গিন্নিপনা। সবগুলোর মধ্যেই কটাক্ষপাত। ব্যাকরণের প্রত্যয়ের যেরকম ভেদনির্বিচার হওয়া উচিত, এ একেবারেই তা নয়। চণ্ডীমণ্ডপে বসে বিরুদ্ধ দলকে খোঁচা দেবার জন্যেই এগুলো যেন বিশেষ করে শান-দেওয়া।
আনা প্রত্যয়টা দেখো: বাবুআনা বিবিআনা সায়েবিআনা নবাবিআনা মুরুব্বিআনা গরিবিআনা। বলা বাহুল্য, এর ভাবখানা একেবারেই ভালো নয়। ঐ যে ‘গরিবিআনা’ শব্দটা বলা হয়েছে, ওর মধ্যেও কপট অহংকারের ভাণ আছে। যদি বলা যায় ‘সাধুআনা’ তা হলে বুঝতে হবে সেটা সত্যিকার সাধুত্ব নয়।
এই জাতের আর-একটা প্রত্যয় আছে, গিরি। তার সঙ্গে প্রায় ‘ফলাতে’ কথার যোগ হয়: বাবুগিরি গুরুগিরি সাধুগিরি দাতাগিরি। এতে ভাণ করা, মিথ্যে অহংকার করা বোঝায়।
আরও একটা প্রত্যয় দেখা যাক, অনি বা আনি: বকুনি ধমকানি ছিঁচ্কাঁদুনি শাসানি হাঁপানি নাকানি-চোবানি জ্বলুনি কাঁপুনি মুখ-বাঁকানি খ্যাঁকানি লোক-হাসানি ফোঁপানি গ্যাঙানি ভ্যাঙানি ঘ্যাঙানি খিঁচুনি ছট্ফটানি কুট্কুটুনি ফোস্ফোঁসানি। এর সবগুলিই গালদেওয়া শব্দ নয়, কিন্তু অপ্রিয়। হাসিটা তো ভালো জিনিস, কিন্তু আনি প্রত্যয় দিয়ে হল ‘লোক-হাসানি’, হাসির গুণটা গেল বিগড়িয়ে। ছাঁকুনি নিড়ুনি বিনুনি চাটনি শব্দ বস্তুবাচক, সেইজন্যে তাদের মধ্যে নিন্দার ঝাঁজ প্রবেশ করতে পারে নি।
ইআ [বিকারে ‘এ’] প্রত্যয়টা যখন বস্তু্সূচক না হয়ে ভাবসূচক হয়, তখন তার ইঙ্গিতে কোথাও সুখের বা শ্রদ্ধার আভাস পাব না। যেমন: নড়্বড়ে নিড়্বিড়ে খিট্খিটে কট্মটে টন্টনে কন্কনে