পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

‘যার যার’ ‘তার তার’ মানবার্থে চলে। এইরকম দ্বৈতে বহুকে এক এক ক’রে দেখবার ভাব আছে। ভিন্ন ভিন্ন তুমি’কে নির্দেশ, ক’রে ‘তুমি তুমি’ ‘তোমার তোমার’ বললে দোষ ছিল না, কিন্তু বলা হয় না।

 ষে বাক্যের প্রথম অংশে দ্বৈতে আছে যে তার পূরণার্থক শেষ অংশে সমগ্রবাচক বহুবচন ব্যবহারটাই নিয়ম, যেমন: যে যে লোক, বা যাঁরা যাঁরা এসেছেন তাঁদের পান দিয়ো।

 যত এত তত অত কত শব্দ পরিমাণবাচক। এদের মধ্যে ‘তত’ শব্দ ছাড়া আর সবগুলিতে দ্বিত্ব চলে।

 এখন তখন যখন কখন কালবাচক। ‘কখন’ শব্দ প্রায়ই প্রশ্নসূচক, সাধারণভাবে ‘কখন’ বলতে অনিশ্চিত বা দূরবতী সময় বোঝায়: কখন যে গেছে। কিন্তু ‘কখনো’ প্রশ্নার্থক হয় না। প্রশ্নের ভাবে যখন বলি ‘সে কখনো এ কাজ করে’ তখন ‘কি’ অব্যয় শব্দ ঊহ্য থাকে। দ্বিত্বে ‘কখনো’ শব্দের অর্থ ‘মাঝে মাঝে’। ‘কখনোই’ একটা ‘না’ চায়: কখনোই হবে না।

 ‘কখন’ শব্দের ‘কী খেনে’-ভঙ্গীওয়ালা রূপ কাব্যসাহিত্যে পাওয়া যায়।

 ‘কভু’ শব্দের অথও ‘কখনো’। এখন দৈবাৎ পদ্যে ছাড়া আর কোথাও কাজে লাগে না। ওর জুড়ি ছিল ‘তবু’ শব্দটা, কিন্তু ওর সময়বাচক অর্থটা নেই। ‘তবু’ শব্দের দ্বারা এমন কোনো সম্ভাবনা বোঝায় যেটা ঠিক উপযুক্ত বা আকাঙ্ক্ষিত নয়: যদিও রৌদ্র প্রখর তবু সে ছাতা মাথায় দেয় না, আমি তো বারণ করেছি তবু যদি যায় দুঃখ পাবে। কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণে বহুবচন বা কর্মকারক নেই। সম্বন্ধপদে: এখনকার তখনকার কখনকার, কোন্‌ সময়কার, কোন্‌ সময়টার। অধিকরণে: কোন্‌ সময়ে, যে সময়ে। পদ্যে ‘কোন্‌ খনে’, গ্রাম্য ভাষায় ‘কী খেনে’ এবং অধিকাংশ স্থলেই শুভ অশুভ লক্ষণসূচনায় এর প্রয়োগ হয়। অপাদান: যখন থেকে, কোন্‌ সময় থেকে।

 কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ আরও একটা বাকি আছে ‘কবে’। ওর

৯২