পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

করলে ঝাঁজ আরও বাড়ে। ‘কী বা’কে বাঁকিয়ে ‘কী বে’ করলে ভঙ্গীতে আরও বিদ্রুপ পৌঁছয়। ‘ই’র সহযোগিতা বাদ দিলে ‘কী’ বিশুদ্ধ বিস্ময় প্রকাশের কাজে লাগে: কী সুন্দর তার মুখ।

 সম্মান খর্ব করবার বিশেষ প্রত্যয় বাংলাভাষায় যথেষ্ট পাওয়া গেল, সর্বনামের প্রয়োগেও বক্রোক্তি দেখা গেছে। কিন্তু শ্রদ্ধা বা প্রশংসা -প্রকাশের প্রয়োজনে ভাষায় কেবল একটা বিশেষ ভঙ্গী আছে ‘আহা’ অব্যয় শব্দটার যোগে, যেমন: আহা মানুষটি বড়ো ভালো। করুণা প্রকাশেও এর ব্যবহার আছে। অথচ ‘আহামরি’ শব্দের পরিণামটা ভালো হয় নি। গোড়ায় এর উদ্দেশ্য ভালোই ছিল, এখন এ শব্দটার যে প্রকৃত স্বভাব সেইটাই গেছে বিপরীত হয়ে। এটা হয়েছে বিদ্রূপের বাহন। ওটাকে আরও একটু প্রশস্ত ক’রে হল ‘আহা ম’রে যাই’; এর ঝাঁজ আরও বেশি। পদে পদে বাংলায় এই বাঁকা ভঙ্গীটা এসে পড়ে: ভা-রি তো পণ্ডিত, ম-স্ত নবাব। এদের কণ্ঠস্বর উৎসাহে দীর্ঘকৃত হয়ে গাল পাড়ে যথার্থ মানেটাকে ডিঙিয়ে। ‘হাঁদারাম’ ‘ভোঁদারাম’ ‘বোকারাম’ ‘ভ্যাবাগঙ্গারাম’ শব্দগুলোর ব্যবহার চূড়ান্ত মূঢ়তা প্রকাশের জন্যে। কিন্তু ‘সুবুদ্ধিরাম’ ‘সুপটুরাম’ বলবার প্রয়োজনমাত্র ভাষা অনুভব করে না। সবচেয়ে অদ্ভুত এই যে ‘রাম’ শব্দের সঙ্গেই যত বোকা বিশেষণের যোগ, ‘বোকা লক্ষ্মণ’ বলতে কারও রুচিই হয় না।

 ‘কি’ যেখানে অব্যয় সেখানে প্রশ্নের সংকেত। ঊহ্য বিশেষ্যের সহযোগে বিশেষণে ওর প্রয়োগ আছে। তুমি কী করছ: অর্থাৎ ‘কী কাজ’ করছ। আর-একটা প্রয়োগ বিস্ময় বোঝাতে, যেমন: কী সুন্দর। পূর্বেই বলেছি তীক্ষ্মধার স্বরবর্ণ ‘ই’ সঙ্গে না থাকলে এর সৌজন্য বজায় থাকে। বিশেষণ-প্রয়োগে ‘কী’, যথা: কী কাজে লাগবে জানি নে। ‘কী’ বিশেষণ শব্দে অচেতন বা নির্বস্তুক বা অনিদিষ্ট বোঝায়: ওর কী দশা হবে, কী হতে কী হল। বিকল্প বোঝাতে ওর প্রয়োগ আছে, যেমন: কী রাম কী শ্যাম কাউকেই

৯৬