পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

為a বাংলায় ভ্রমণ গুণরাজ খানের পুত্র সত্যরাজ খান (প্রকৃত নাম লক্ষ্মীকান্ত) ও তৎপুত্র বসু রামানন্দ শ্রীচৈতন্যদেবের বিশেষ অন্তরঙ্গ সহচর ছিলেন। কুলীনগ্রামবাসিগণের একটি সঙ্কীৰ্ত্তনের দল ছিল, পুরীতে রথাগ্রে শ্রীচৈতন্যদেব যখন নৃত্য করেন, তখন এই কুলীনগ্রামের কীৰ্ত্তন সমাজও তথায় নৃত্যগীতাদিতে যোগদান করিয়াছিলেন। একবার জগন্নাথদেবের পুনর্যাত্রার সময় একটি পট্টডোরী বা রজ্জ্ব ছিন্ন হইয়া যায়। শ্রীচৈতন্যদেব ঐ পট্টডোরীর ছিন্ন অংশ লইয়া রামানন্দ বসুর হাতে দিয়া বলেন— “ এই পটডোরীর তুমি হও যজমান। প্রতি বর্ষ আনিবে ডোরী করিয়া নিৰ্ম্মাণ।” সেই হইতে বর্তমান কাল পর্য্যস্ত কুলীনগ্রামের বসুবংশ জগন্নাথদেবের পটডোরী যোগাইয়া আসিতেছেন। আজিও কুলীনগ্রাম হইতে পট্টডোরী না পৌছানো পর্য্যস্ত পুরীতে জগন্নাথদেবের রথ টানা হয় না। বসু রামানন্দ একজন পদকৰ্ত্তা ছিলেন। বৈষ্ণব সাহিত্যে তাহার নামের ভনিতাযুক্ত কতকগুলি সুন্দর পদ আছে। “ যবন হরিদাস ’ নামে পরিচিত পরম ভক্ত ব্ৰহ্ম হরিদাস ঠাকুর বহু দিন কুলীনগ্রামে অবস্থান করিয়াছিলেন। তাহার প্রভাবে কুলীনগ্রামে বৈষ্ণব ধর্মের বিশেষ প্রসার ঘটে। “ কুলীনগ্রামীর ভাগ্য কহনে না যায়। শূকর চরায় ডোম সেহ কৃষ্ণ গায়।” কুলীনগ্রামের দক্ষিণাংশে যে নির্জন স্থানে হরিদাস ঠাকুর সাধন ভজন করিয়াছিলেন উহা হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ী নামে পরিচিত। এই পাটবাড়ীর মন্দিরে গৌরাঙ্গদেব ও হরিদাস ঠাকুরের মুক্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। যে কেলিকদম্ব তলে হরিদাস ঠাকুর উপবেশন করিতেন উহা আজিও বিদ্যমান আছে। কথিত আছে যে চৈতন্যদেব এই স্থানে পদার্পণ করিয়াছিলেন। প্রতি বৎসর অগ্রহায়ণ মাসের শুক্ল ত্রয়োদশী তিথিতে গৌরাঙ্গদেবের আগমন সমরণ ও মাঘ মাসের শুক্ল চতুর্দশীতে হরিদাস ঠাকুরের তিরোভাব উপলক্ষে এই স্থানে মেলা ও মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কুলীনগ্রামে বহু প্রাচীন কীৰ্ত্তি আছে। উহার মধ্যে শিবানীদেবী, গোপেশ্বর মহাদেব, মদনগোপালজীউ ও গোপীনাথের মন্দির সমধিক বিখ্যাত। আদ্যশক্তি শিবানীদেবীর মুক্তি পাষাণময়ী। মন্দির গাত্রের উৎকীর্ণ লিপি হইতে জানা যায় যে ৯৬৩ শকে অথাৎ ১০৪১ খৃষ্টাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিবানী মন্দিরের পাশ্ব দিয়া লুপ্তস্রোতা কংস নদীর খাত দেখা যায়। গোপেশ্বর মহাদেবের মন্দির কুলীনগ্রামের বিখ্যাত সরোবর গোপালদীঘির নৈঋত কোণে অবস্থিত। এই মন্দির গাত্রে উৎকীর্ণ একটি লিপি হইতে জানিতে পারা যায় যে ১৬৬৬ শকে কুলীনগ্রামের অন্তর্গত চৈতন্যপুর নিবাসী নারায়ণ দাস নামক জনৈক ব্যক্তি এই মন্দিরের সংস্কার করেন। সুতরাং মন্দিরটি যে ইহার অন্তত: ১৫০ বৎসর পূবেৰ্ব প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল এইরূপ অনুমান করা যাইতে পারে | চৈতন্যপুর কুলীনগ্রামবাসী বসুবংশের অন্যতম বাসস্থল ছিল। চৈতন্যদেবের নামানুসারেই যে স্থানটির এইরূপ নামকরণ হইয়াছিল তাহ সহজেই বুঝিতে পারা যায়। এই গ্রামের চতুদিকে গড় ছিল। সাধারণ লোকে আজিও ইহাকে “রামানন্দ ঠাকুরের গড় বাড়ী ’ নামে অভিহিত করে।