পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ বাংলায় ভ্রমণ হিসাবে স্মরণীয় থাকিবে। আউল মনোহর দাসের পদাবলীর প্রথম ও বিরাট সংগ্ৰহ “পদ সমুদ্রের ” পর রাধামোহন ঠাকুরের “পদাঘৃত সমুদ্র” সঙ্কলিত হয়; ইহার ৮৫২টি পদের মধ্যে ৪০০টি রাধামোহনের নিজের । খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাবদীর প্রথম ভাগে রাধামোহন ঠাকুরের প্রিয় শিষ্য গোকুলানন্দ সেন বা বৈষ্ণবদাস তাহার প্রসিদ্ধ সংগ্রহ “পদ কল্পতরু” সঙ্কলন করেন; ইহাতে ৩১০১টি পদ আছে। এই গ্রন্থে বৈষ্ণবদাস তাঁহার গুরু রাধামোহন ঠাকুরকে অদ্বৈতাচার্য্যের দ্বিতীয় প্রকাশ বলিয়াছেন। পদাবলী সংগ্রহ গুলির মধ্যে পদকল্পতরুই সচরাচর ব্যবহারের পক্ষে প্রকৃষ্ট । মালিহাট হইতে ৫ মাইল পশ্চিমে ভরতপুর থানা, এই থানার অন্তর্গত কাঞ্চনগড়িয়া গ্রামে চৈতন্যদেবের পরম ভক্ত হরিদাস আচার্য্যের জন্মস্থান । চৈতন্যদেবের তিরোভাবে হরিদাস অত্যন্ত আঘাত পান এবং শীঘ্রই মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাহার মৃত্যু তিথিতে সুপ্রসিদ্ধ শ্রীনিবাস আচাৰ্য্য কাঞ্চনগড়িয়ায় আসিয়া একটি বিরাট উৎসব সমাধান করিয়াছিলেন। 參 h—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ৯৪ মাইল । স্টেশন হইতে দেড় মাইল দক্ষিণ-পূবেৰ্ব ভাগীরথীর পশ্চিম কূলে রাঙ্গামাটি নামে একটি প্রাচীন স্থানের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। নদীর অপর পারে পূবর্ব-বঙ্গ রেলপথে অবস্থিত বহরমপুর শহর এখান হইতে ৬ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব অৰস্থিত। এই স্থানের মৃত্তিক কঠিন ও রক্তাভ। গঙ্গার ভাঙ্গনে ইহার অধিকাংশ স্থান বিধূস্ত হইয়া গিয়াছে। এখনও এখানে যে সকল উচচ ভূখণ্ড ও ঢিবি আছে তাহা ভগ্ন মৃৎপাত্র ও পুরাতন ইষ্টকাদির দ্বারা পরিপূর্ণ। বৰ্ত্তমানে এই স্থানের নিয়ে এক বিস্তৃত চর পড়িয়াছে এবং পুরাতন খাত পরিত্যাগ করিয়া গঙ্গা প্রায় এক মাইল দূরে নূতন খাত দিয়া প্রবাহিত হইতেছে। যৎকালে গঙ্গার ভাঙ্গনে রাঙ্গামাটি ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল, সেই সময়ে অনেকগুলি বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তর খণ্ড, গৃহের ছাদ ও খিলান ও নানাপ্রকার ধাতুনিৰ্ম্মিত দ্রব্যাদি গঙ্গাগর্ভে পতিত হইয়াছিল। এককালে যে এখানে একটি বৃহৎ সমৃদ্ধিশালী নগর ছিল তাহা ইহার বর্তমান অবস্থা দেখিয়াও বুঝিতে পারা যায়। ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে চৈনিক পর্য্যটক যুয়ানু চোয়াঙের বর্ণিত কর্ণসুবর্ণ রাজ্যের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ নগরী এই স্থানেই অবস্থিত ছিল। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে য়ুয়ান্‌ চোয়াঙ কর্ণসুবর্ণ রাজধানীর নিকট “ লো-টো-বী-চী ’ বা রক্তভিত্তি নামে বৌদ্ধ সঙ্ঘারাম দেখিয়াছিলেন বলিয়া তাহার ভ্রমণ বৃত্তাস্তে বর্ণিত আছে। “ রক্তভিত্তি " বা “রক্তমৃত্তি ” নাম হইতেই রাঙামাটি নাম হইয়াছে, অনেকে এইরূপ অনুমান করেন। কর্ণসুবর্ণের সহিত রাঙামাটির সম্বন্ধের বা অভিন্নত্বের প্রমাণ স্বরূপ আরও বলা হয়, যে পূৰেৰ এই স্থান কানসোণ নামেও অভিহিত হইত। কানসোণ নামটি যে কর্ণসুবর্ণ নামেরই অপভ্রংশ তাহা বোধ হয় বলার অপেক্ষা রাখে না। যুয়ান চোয়াং লিথিয়াছেন যে কর্ণসুবর্ণ রাজ্যের পরিধি প্রায় তিনশত মাইল ও রাজধানী প্রায় চারি মাইল বিস্তত ছিল। এখানকার জলবায়ু অতি স্বাস্থ্যকর ছিল এবং অধিবাসীরা অথশালী, বিদ্যানুরাগী ও ভদ্রব্যবহার সম্পন্ন ছিলেন। কর্ণসুবর্ণ রাজ্যে ৩০টি সঙ্ঘারামে সম্মতীয় সম্প্রদায়ের প্রায় দহাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন। তাহা ছাড়া দেবদত্ত সম্প্রদায়ের তিনটি সঙ্ঘারাম ছিল ; তথায় দুগ্ধ বা দুগ্ধ হইতে প্রস্তুত খাদ্য নিষিদ্ধ ছিল। এখানে নানা ধর্মের লোক বাস করিতেন এবং ৫০টি হিন্দু মন্দির ছিল। রাজধানীর অন্তঃপাতী “রক্তমৃত্তি ” বিহারে দেশ বিদেশ হইতে বহু বৌদ্ধ পণ্ডিতের সমাবেশ হইত। এই সঙ্ঘারামের উচচ চুড়া রাত্রিকালে আলোক মণ্ডিত করা হইত। ইহা ছাড়া রাজধানীতে অশোক প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি চৈত্যও য়ুয়ান চোয়াঙ দেখিয়াছিলেন। য়ুয়ান চোয়াঙের বণনা হইতে জানা যায় যে মহারাজ শশাঙ্কের বহু পূবর্ব হইতেই রাঙ্গমাটি একটি প্রসিদ্ধবৌদ্ধকেন্দ্র ছিল। য়ুয়ান