পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূবৰ্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ፅፋ মুর্শিদাবাদের ন্যায় ঢাকাও বাংলাদেশের বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল এবং এখানেও ইংরেজ, ফরাসী, ওলন্দাজ ও পর্তুগীজ বণিকগণের কুঠি ছিল। পর্তুগীজের সবর্বপ্রথমে ঢাকায় আসেন এবং সঙ্গতটোলায় তাহাদের কুঠি ছিল শুনিতে পাওয়া যায়। ওলন্দাজের প্রথমে দেশীয় গোমস্ত পাঠাইয়া মাল খরিদ করিতেন, কিন্তু ১৭৪২ হইতে ১৭৫৩ খৃষ্টাব্দের মধ্যে একজন ওলন্দাজ ঢাকার কুঠির কৰ্ত্ত হইয়া আসেন। এখন যেখানে ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতাল তৈয়ারী হইয়াছে পূবেব সেইস্থানে ওলন্দাজদিগের কুঠি ছিল। ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কুঠি বাদশাহ আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৬৮২ খৃষ্টাব্দের পরে নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। পুরাতন কুঠি তেজগ্রামে ছিল কিন্তু পরে বুড়ীগঙ্গার নিকটে ১৭২৪ খৃষ্টাব্দের পর ভিক্টোরিয়া পার্কের পশ্চিমে বর্তমান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল যে স্থানে অবস্থিত সেই স্থানে নূতন কুঠি তৈয়ারী হয়। ঢাকায় ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর বাণিজ্য ১৮১৭ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত চলিয়াছিল। ওলন্দাজেরা ইহা ইংরেজদের ছাড়িয়াদিয়াছিলেন ; ঢাকা নগরে যে স্থানে ফরাসীদের কুঠি ছিল সেই স্থান এখনও ফরাসডাঙ্গা নামে পরিচিত। ফরাসীদিগের কুঠিটি ঢাকার নবাব বাহাদুরের আহসন মঞ্জিল ’ নামক বিখ্যাত প্রাসাদ মধ্যে পড়িয়া গিয়াছে। আধুনিক কালে বসাকগণ ঢাকার ব্যবসায়ক্ষেত্রে সবর্বপ্রধান। তাঁহাদের পুরাতন ব্যবসায় হইতে বাহিরের লোক তাহীদের হটাইতে পারেন নাই । ঢাকায় পাট ও কাচা চামড়ার কারবার বেশ বড় । বহুকাল হইতে এখানে কমদামী সাবান প্রস্তুত হইতেছে। একটি কাচের কারখানাও এখানে আছে। ঢাকার বস্ত্রশিল্প অতি পুরাতন। প্লিনির লেখা হইতে জানা যায় প্রাচীন রোমের মেয়ের "ބރ ঢাকার সূক্ষ্য মসলিনের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। এরিয়ানের পেরিপ্লাস অব দি ঈরিটি য়ন সী ” নামক গ্রন্থেও মসলিনের উল্লেখ আছে। ঢাকা, সোনারগাঁও, ডেমরা, তিতদি প্রভৃতি স্থানে সূক্ষ্যতম মসলিন প্রস্তুত হইত। বর্ষাকালই মসলিন বুনিবার প্রশস্ত সময় ছিল) । মসলিন নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে কথিত হয় যে মাদ্রাজ প্রদেশের মসলিপত্তন বন্দর হইতে ইউরোপীয় বণিকগণ এই বস্ত্র কিনিয়। লইয়া যাইতেন এবং মসলিপত্তন হইতে মসলিন নামের উৎপত্তি। অপর মতে তুরস্ক প্রভূতি দেশে প্রাচীন কাল হইতে এই বস্ত্র রপ্তানী হইত। কিন্তু পরে পর্তুগীজ জল দস্থ্যগণের অত্যাচারে বা এরূপ কোনও কারণে এই ব্যবসায় প্রায় বন্ধ হইয়া যায়। তখন তুরস্কের মোস্থল নগরীতে এই ৰক্স প্রস্তুতে চেষ্ট হয় এবং তথাকার সূক্ষ বস্ত্র মসৃলিন নামে পরিচিত হয়। 岑 বস্ত্রশিল্প এক সময়ে জগদ্বিখ্যাত ছিল । সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ঢাকার সূক্ষ্ম মসৃলিন বস্ত্র ইউরোপের সবর্বত্র রপ্তানী হইত। ভ্রমণকারী ট্রাভাণিয়ার লিখিয়াছেন—ইরাণের দূত মহম্মদ আলি বেগ ভারতবর্ষ হইতে প্রতিগমনকালে শাহকে উপহার দিবার জন্য ৬০ হাত দীর্ঘ একখানা মসলিন একটি অতি ক্ষদ্র নারিকেল খোলের ভিতর করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন। এক গজ প্রস্থ ২০ হাত লৰা একখান মসৃলিন জড়াইয়া একটি অঙ্গুরীয়কের ছিদ্র দ্বারা এদিকে ওদিকে নেওয়া যাইত । এইরূপ ৩০ হাত দীর্ঘ ২ হাত প্রস্থ একখণ্ড ম্যুলিন ওজনে ৪৫ তোলা হইত এবং তাহ ৪০০ । ৫০০, টাক বিক্রয় হইত । কথিত আছে সম্রাট আওরঙ্গজেবের এক কন্যা সাত ফের দিয়া আবরোয়ান মসলিন পরিধান করিয়া পিত সমক্ষে উপস্থিত হইলে নির্লজজা বলিয়া ভৎসিত হন । ১৮৪৬ খৃষ্টাব্দেও মালিন প্রস্তুতের এক পাউণ্ড ওজনের এক ফেটি সূতা মাপিয়া লম্বায় ২৫০ মাইল " নানাগল প্রিয়তমা পত্নী নুরজাহান বেগম ঢাকাই মসলিনের প্রভূত আদর /