পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে 이 দারুজ অগ্রসর হইয়া দেখিলেন তাহার সেই অতি প্রিয় মেরীর মূৰ্ত্তিটি ফিরিয়া আসিয়াছেন। তখন তাহার মনে পড়িল পূবর্ব রাত্রে তিনি যে তাঁহার বণিক বন্ধুর কন্ঠস্বর শুনিতে পাইয়াছিলেন উহ কেবলমাত্র স্বপু নহে। অত:পর মহা আড়ম্বরে এই মূত্তির প্রতিষ্ঠা হইল। ব্যাণ্ডেল গির্জার দক্ষিণে কয়েকটি সমাধির মধ্যে একটি জাহাজের মাস্তুল প্রোথিত দেখা যায়। যে দিন মাতা মেরীর যুক্তি মহাসমারোহে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই দিন অকস্মাৎ একখানি বড় পর্তুগীজ জাহাজ গির্জার ঘাটে আসিয়া উপস্থিত হয় । জাহাজের অধ্যক্ষ বলেন যে তাহারা বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়েন ; জাহাজ রক্ষার অন্য কোন উপায় না দেখিয়া তিনি মাতা মেরীর নিকট প্রাথন ও মানত করেন যে তিনি যেন কৃপা করিয়া জাহাজখানিকে কোন নিরাপদ বন্দরে পৌছাইয়া দেন। কিছু পরে ঝড় থামিলে তিনি সবিস্ময়ে দেখিতে পান যে জাহাজখানি এই গির্জার ঘাটে আসিয়া লাগিয়াছে। জাহাজের নাবিকগণ মহোৎসাহে মাত মেরীর প্রতিষ্ঠা উৎসবে যোগদান করেন এবং মানত রক্ষার জন্য জাহাজের অধ্যক্ষ জাহাজ হইতে একটি মাস্তুল লইয়া গির্জায় উপহার প্রদান করেন। তদবধি এই উৎসর্গীকৃত মাস্তুল গির্জার প্রাঙ্গনে দাড়াইয়া আছে। দীর্ঘকাল ধরিয়া ঝড়, জল ও রৌদ্র ইহার কোনই ক্ষতি করিতে পারে নাই। এই জাহাজ বা অধ্যক্ষের নাম জানা যায় নাই । ব্যাণ্ডেল জংশনের নিকটবর্তী দেবানন্দপুর গ্রাম পরলোকগত সাহিত্যাচাৰ্য্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান। সুপ্রসিদ্ধ কবি রায় গুণাকর ভারতচন্দ্র ও কিছুদিন দেবানন্দপুরে অবস্থান করিয়াছিলেন। সম্প্রতি এই গ্রামে শরৎ চন্দ্র ও ভারত চন্দ্রের উদ্দেশ্যে সমৃতি-ফলক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। - ব্যাণ্ডেল হইতে একটি শাখা লাইন জুবিলী ব্রিজের উপর দিয়া গঙ্গা অতিক্রম করিয়া পূবর্ববঙ্গ রেলপথের নৈহাটি স্টেশনের সহিত মিলিত হইয়াছে এবং অপর একটি শাখা নবদ্বীপ ও কাটোয়া হইয়া সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত বারহাড়োয় পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। আদি সপ্তগ্রাম—হাওড়া হইতে ২৭ মাইল দূর। স্টেশনের নিকটেই প্রাচীন সপ্তগ্রামের ধবংসাবশেষ অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরাজগণের রাজত্বকালে সপ্তগ্রাম একটি বিখ্যাত স্থান ছিল ও তৎকালে ইহা একটি তীর্থ বলিয়া গণ্য হইত। কথিত আছে, পৌরাণিক যুগের রাজা প্রিয়ত্ত্বতের সপ্ত পুত্র এই স্থানে তপস্যা করিয়া ঋষিত্ব লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া ইহার নাম হয় সপ্তগ্রাম। কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম, চক্রবর্তী লিখিয়াছেন, “সপ্ত ঋষির শাসনে বোলায় সপ্তগ্রাম ”। বিপ্রদাসের মনসামুঙ্গল, মাধবাচার্য্যে চণ্ডী এবং লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ধোয়ী প্রণীত “পবনদূতম্" নাকি কাব্যে এই স্থানের উল্লেখ আছে। এক সময়ে ইহার খ্যাতি সুদূর রোম পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কেহ কেহ ইহাকে গ্রীকৃগণ বর্ণিত গঙ্গারিডি রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী বলিয়া মনে করেন। ইংরেজ অধিকারের পূবর্বকাল পর্য্যন্ত সপ্তগ্রাম একটি বিখ্যাত বন্দর ছিল এবং এখানে দেশবিদেশের বাণিজ্যতরীর সমাগম হইত। নিকটস্থ হুগলী বন্দরের অভ্যুথান এবং সরস্বতী নদী মজিয়া যাওয়ার সহিত সপ্তগ্রামের পতন ঘটে এবং ক্রমে ইহার সমুদয় ব্যবসাবাণিজ্য হুগলীতে স্থানান্তরিত হয়। মুঘলগণের হস্তে পর্তুগীজগণের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটিলে সপ্তগ্রামের ফৌজদার হুগলীতে গিয়া বসেন এবং সমস্ত সরকারী কাৰ্য্যালয়ও তথায় চলিয়া যায়। পূবৰ্বকালে সরস্বতীর খাত দিয়াই ভাগীরথীর “অধিকাংশ জলরাশি প্রবাহিত হইত এবং দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যের পথও ছিল সরস্বতী নদী।