পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SJ বাংলায় ভ্রমণ মহাশয় নানা স্থান হইতে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আনিয়াছিলেন এৰং কথিত আছে নদীয়ার মহারাজকেও শান্তিপুরে আনিয়া এক লক্ষ টাকা নজর দিয়া সম্বৰ্দ্ধনা করিয়াছিলেন। গোকুলচাদের মন্দিরটি ১৭৪০ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত। জলেশ্বর মহাদেবের মন্দিরটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে নদীয়ার মহারাজ রামকৃষ্ণের মাতা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দির গুলি বাংলার শিল্পপদ্ধতি অনুসারে নিৰ্ম্মিত এবং ইহাদের কারুকার্য্য অতি সুন্দর। বিশেষতঃ জলেশ্বর মন্দিরের প্রাচীর গাত্রে উৎকীর্ণ পৌরাণিক চিত্রাদির শিল্প চাতুৰ্য্য অতি চমৎকার। শান্তিপুরের বড় বাজারে সিদ্ধেশ্বরী কালী নামে এক প্রকাণ্ড কালীমূৰ্ত্তি আছে। এরূপ বড় বিগ্রহ সচরাচর দেখা যায় না। ইহা ছাড়া গোস্বামীদের নাট মন্দির ও পঞ্চরত্ন মন্দিরও দ্রষ্টব্য। শান্তিপুরে অধিকাংশ পালাপাৰ্ব্বণ বিশেষ আড়ম্বরের সহিত অনুষ্ঠিত হয়, তবে এখানকার রাসের উৎসবই দেশ বিখ্যাত। শান্তিপুরের ভাঙ্গ রাসের শোভাযাত্রা দেখিবার জন্য বাংলার নানা স্থান, এমন কি মুদূর ত্রিপুরা ও মণিপুর হইতেও বহু যাত্রীর সমাগম হয়। রাস উৎসবের শেষ দিন গোস্বামিগণের গৃহস্থিত বিগ্ৰহগণকে চতুৰ্দ্দোলের উপর স্থাপন করিয়া এক সঙ্গে শোভাযাত্রা সহকারে নগর প্রদক্ষিণ করানো হয়। ইতারই নাম “ভাঙ্গ রাস”। এই মেলায় সুন্দর দেশীয় পুতুল প্রভৃতি লোক-শিল্পের নিদর্শন এখনও বিক্রীত হয়। - মুসলমান যুগেও শান্তিপুর একটি প্রসিদ্ধ স্থান ছিল। পাঠান আমলে এই স্থানে একজন কাজী ছিলেন । বাদসাহ আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০৫ খৃষ্টাব্দে ফৌজদার মহম্মদ ইয়ার র্থ কর্তৃক শান্তিপুরের তোপখানায় একটি সুদৃশ্ব মসজিদ নিৰ্ম্মিত হয়। ইহা শান্তিপুরের অন্যতম দ্রষ্টব্য বস্তু। প্রাচীন কাল হইতেই শান্তিপুর বস্ত্র শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানকার প্রস্তুত সূক্ষ্ম বস্ত্র পাশ্চাত্য দেশ সমূহেও রপ্তানি হইত। ইংরেজ রাজত্বের গোড়ার দিকে এখানে ঈস্ট্র ইণ্ডিয়া কোম্পানির একটি বড় কুঠি ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম কয়েক বৎসর কোম্পানি দেড় লক্ষ পাউণ্ড বা সাড়ে বাইশ লক্ষ টাকার স্মৃতির কাপড় প্রতিবর্ষে ক্রয় করিতেন । ১৮১৩ খৃষ্টাব্দ হইতে ম্যানচেষ্টারের সস্তা কাপড় আসায় এই শিল্পের পতন আরম্ভ হয়। ১৮৭০ খৃষ্টাব্দে এখানকার কুঠির ধ্বংসাবশেষ নীলাম করিয়া বিক্রয় করা হয়। বর্তমানেও শান্তিপুর বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত । মবদ্বীপের ন্যায় শান্তিপুরও পূৰ্ব্বে সংস্কৃত চর্চার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখানকার পণ্ডিতবর্গের মধ্যে শ্রীরাম গোস্বামী, চন্দ্রশেখর বাচস্পতি ও রামনাথ তর্করত্ন প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ সুপ্রসিদ্ধ হাস্যরসিক গোপালভাড় শান্তিপুরের অধিবাসী ছিলেন। তাহার লোককে হাসাইবার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। র্তাহার রসিকতা সম্বন্ধে বহু কাহিনী জনসমাজে প্রচলিত আছে। উনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে শান্তিপুরে আশানন্দ মুখোপাধ্যায় নামে একজন বীরপুরুষ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যেরূপ সরল প্রকৃতি ও সহৃদয় ছিলেন, তাহার দেহেও তদ্রুপ অমিতশক্তি ছিল ।