পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

XX8 বাংলায় ভ্রমণ চঞ্চল জলস্রোত পৃথিবীতে অতি অল্পই আছে। সুতরাং এই সেতু নিৰ্ম্মাণ করিতে বিশেষ বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হইয়াছিল। পদ্মার প্রবল স্রোতে স্তম্ভগুলি যাহাতে অবিচলিত থাকিতে পারে তজ্জন্য ইহাদের কোন কোনটিকে নদীতল হইতে প্রায় ১৫০ ফুট নীচু হইতে গাঁথিয়া তোলা হইয়াছে। এই সেতু সংরক্ষণের জন্য পদ্মার উভয় তীর দিয়া প্রকাণ্ড পাথরের বাধ দিতে হইয়াছে এবং জলস্রোতের বেগ সংহত করিবার জন্য বহু পাশখাল খনন ও জলমধ্যে “পিরামিড” নিৰ্ম্মাণের প্রয়োজন হইয়াছে । ভারতের প্রধান প্রধান ইঞ্জিনীয়রগণকে লইয়া গঠিত একটি সমিতির পরামর্শক্রমে এই সেতু সংরক্ষণ করা হয়। এই সেতুটি সমগ্র জগতের মধ্যে স্থপতিবিদ্যার একটি অপূর্বব কীৰ্ত্তিস্বরূপ পরিগণিত। সেতুর উপরে লোক চলাচলের পথ আছে। সেতুর উপর হইতে পদ্মানদীর দৃশ্ব অতি সুন্দর দেখায়। বর্ষাকালে যখন গৈরিক জলস্রোতসম্ভারে পদ্মার কলেবর অতিশয় পরিপুষ্ট হয়, তখনকার দৃশ্য যেরূপ ভীষণ সেইরূপই সুন্দর। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তখন “কুল ছাড়ি নদী কলকল্লোলে এল পল্লীর কাছে রে ” এই বিপুল জলরাশির উপর দিয়া হলদে ও কমলালেবু রঙের পাল তোলা নৌকাগুলির সহজ ও স্বচ্ছন্দ গতিতে ভাসিয়া যাওয়ার দৃশু অপূর্ব ও অনিৰ্ব্বচনীয়। যাহারা এই সেতু দেখিতে চান তাঙ্গাদিগের পক্ষে ভেড়ামারার পরবর্তী স্টেশন পাকশীতে নামাই সুবিধা। পাকশী স্টেশন এই সেতুর ঠিক পাশ্বেই অবস্থিত। পাকশী হইতেই পাবনা জেলার সীমানা আরম্ভ। পদ্মাতীরবর্তী স্থানগুলি বিশেষ স্বাস্থ্যকর। পাকৃশীতে পূর্ববঙ্গ রেলপথের বিভাগীয় দপ্তর অবস্থিত এবং ইহা একটি প্রসিদ্ধ রেলওয়ে বসতি; এই বসতিতে যাইবার সুবিধার জন্তা পরবর্তী স্টেশন ঈশ্বরদি ইষ্টতে একটি সাইডিং আছে । ঈশ্বরদি জংশন—কলিকাতা হইতে ১২৫ মাইল দূর। ইহা পুৰ্ব্বে একটি ক্ষুদ্র গগুগ্রাম ছিল, কিন্তু রেলের কল্যাণে বৰ্ত্তমানে একটি বৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হইয়াছে । ঈশ্বরদি হইতে ২ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে সাড়া গ্রাম । হাডিং সেতু নিৰ্ম্মাণের পূৰ্ব্বে ইহা পূর্ববঙ্গ রেলপথের একটি প্রধান ঘাট স্টেশন ছিল। এখন মালগুদামের জন্ত ঈশ্বরদি হইতে একটি সাইডিং আছে। বিহার হইতে আগত কয়েকটি পরিবার এখানে একপ্রকার মোট কম্বল তৈয়ারী করে; পশমের জন্য ইহার ভেড়া পুষিয়া থাকে। ঈশ্বরদি হইতে জেলার সদর শহর ১৮ মাইল দূরবত্তী পাবনা পৰ্য্যন্ত রেলওয়ে-সংশ্লিষ্ট মোটরবাস যাতায়াত করে। পাবনা শহর ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত এবং ইহার প্রায় দুই মাইল দক্ষিণে গঙ্গা বা পদ্মা প্রবাহিত । পদ্মার ভাঙ্গনের জন্য শহর রক্ষা করা অনেকবার উদ্বেগের কারণ হইয়াছে। চার শত বৎসর পূর্বেও গঙ্গা এই পথে বহিত না; ইহার প্রধান ধারা তখন ভাগীরথী দিয়াই চলিত, কিন্তু পলি পড়িয়া নদীতল উচ্চ হইয়া উঠিলে পর পর জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গ, গড়াই প্রভৃতি দিয়া গঙ্গার প্রধান প্রবাহ বহিতে থাকে ; এই রূপে নদী ক্রমশঃ পুৰ্ব্বদিকে চলিতে চলিতে বৰ্ত্তমান পদ্মার খাত খুজিয়া লয়। এইরূপ অনুমিত হয় যে গঙ্গার ক্রমশঃ পূৰ্ব্ব দিকে গমনের সহিত উত্তরে কোশী নদীর পশ্চিমাভিমুখে গমনের ঘনিষ্ট সম্বন্ধ আছে। পূৰ্ব্বে কোশী মহানন্দার সহিত মিলিত হইয়া দক্ষিণ-পূৰ্ব্বে বহিয়া ব্রহ্মপুত্রে পতিত হইত। পরে ইহারা গঙ্গার সঠিত যুক্ত হয় এবং কোশী ক্রমশঃই 8a.