পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার সাধারণ পরিচয় e প্রাকৃতিক গঠন--বাংলাদেশ একটি বিস্তীর্ণ সমতল ক্ষেত্র। ইহার দক্ষিণ দিক সুন্ন অপর তিন দিক পাহাড়ের প্রাচীরে বেষ্টিত। উত্তরদিকে হিমালয় পৰ্ব্বতের সামুদেশ ক্রমশঃ নিম্ন হইয়া জলপাইগুড়ি জেলা পৰ্য্যন্ত আসিয়াছে ; গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড় ময়ননসিংহ জেলা পর্যান্ত বিস্তৃত রহয়াছে। পশ্চিমদিকে ছোট নাগপুরের মালভূমি বাকুড়া জেলার মধ্যে ও'রাজমহল পাহাড় বীরভূম জেলার মধ্য পৰ্য্যন্ত প্রবেশ করিয়াছে। বাংলার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে ওড়িষ্যার পাহাড় শ্রেণী অবস্থিত। উত্তরবঙ্গে দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাংশ, রাজশাহীর উত্তরাঞ্চল, বগুড়ার পশ্চিমাংশ, রংপুরের দক্ষিণপশ্চিম ও মালদহ জেলার পূর্বাঞ্চল ব্যাপিয়া অবস্থিত একটি উচ্চ ভূভাগ দৃষ্ট হয়। ইহা “বরিন্দ ” (উচ্চভূমি) বা বরেন্দ্র নামে পরিচিত। ইহার মৃত্তিকা সাধারণতঃ লাল ও স্থানে স্থানে হরিদ্র রঙের এবং কঙ্করময়। ভূতত্ত্ববিদগণের মতে বাংলাদেশের এই অঞ্চল অন্যান্য স্থানের তুলনায় বহু প্রাচীন । গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনার মধ্যস্থলে অবস্থিত প্রায় দুইশত মাইল বিস্তৃত ত্রিকোণাকার ভূখণ্ড গাঙ্গেয় “ব” দ্বীপ নামে পরিচিত। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের গতি পরিবর্তনের ফলেই এই সমতল চরভূমির উদ্ভব হইয়াছে। এই ভূখণ্ডে বহু নদী নালা ও খাল বিল প্রভৃতি আছে। বাংলাদেশের অন্যান্ত বিভাগের তুলনায় এই অঞ্চল অপেক্ষাকৃত নবীন বলিয়া বিবেচিত হয় । বাংলার রাজধানী কলিকাতা এক্ট গাঙ্গেয় “ব ” দ্বীপের উপর অবস্থিত। এই “ব ” দ্বীপের প্রাচীন নাম বকদ্বীপ বা বগড়ি । অরণ্য—বাংলার দক্ষিণদিকে বঙ্গোপসাগরের উপকুল দিয়া গঙ্গা ও মধুমতী এই দুই নদীর মোহনার মধ্যে প্রায় ২০০ মাইল দীর্ঘ এক গভীর অরণ্য অবস্থিত। এই অরণ্য সুন্দরবন নামে পরিচিত। ইহার প্রস্থ স্থানভেদে ৬০ হইতে ৮০ মাইল পৰ্য্যন্ত। এই অরণ্যে সুন্দরী, গরাণ, ওড়া, বচ, পশুরি প্রভৃতি গাছ পাওয়া যায়। গোলপাতা ও হোগলাও এই স্থানে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এই অরণ্যের ভূমি অতি নিম্ন ও বহু খাল, মালা ও নদীর দ্বারা পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ইহার নিম্নপ্রদেশ জলপ্লাবিত হইয়া যায়। এই অরণ্যে ব্যাস্ত্র, গণ্ডার, মহিষ, শূকর, হরিণ ও নানাজাতীয় অজগর ও সর্প প্রভৃতি বাস করে। ইহার নদীনালাতে বহু কুমীর দেখিতে পাওয়া যায়। মুন্দরবনের বাঘ পৃথিবীর মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা ভীষণ জন্তু । সমগ্র জগতে “ রয়াল বেঙ্গল টাইগার ” নামে এই বাঘ সুপরিচিত। সুন্দরবনের উত্তরাঞ্চলে ক্রমশঃ লোকের বসবাস ও চাষ-আবাদ হইতেছে। সুন্দরবন ছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অরণ্যের নাম মধুপুরের জঙ্গল। এই জঙ্গল ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত । এই জঙ্গলেও বহু হিংস্র প্রাণী বাস করে। এই জঙ্গল হইতে প্রচুর পরিমাণে গজারি কাঠ, মধু ও মোম সংগৃহীত হয় এবং এখানে বহু ভেষজ তৃণলতাদি পাওয়া যায়। জলপাইগুড়ি জেলার তরাই অঞ্চল অর্থাৎ হিমালয়ের পাদদেশস্থ ভূভাগও অরণ্য সমাবৃত ও হিংস্র জন্তু দ্বারা পরিপূর্ণ। নদনদী—বাংলা নদী মাতৃক দেশ। এই দেশের ন্যায় এত অধিক সংখ্যক নদ নদী ভারতের আর কোন প্রদেশেই নাই। বাংলা দেশের নদ নদীর মধ্যে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা সৰ্ব্বপ্রধান । এই নদীত্রয়ের গতি পরিবর্তনের সহিত বাংলার বহু-স্থানের উত্থান ও