পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ Σ Φ 2. جب- میاہممم . মসে তিনধারিয়া পৰ্য্যন্ত রেলপথ খোলা হয় এবং ১৮৮১ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসের মধ্যে দ জলিং পর্য্যন্ত লাইন সমাপ্ত হয়। এই পাৰ্ব্বত্য রেলপথটিতে একটিও সুড়ঙ্গ না থাকায় ভ্রমণকারীর পক্ষে অন্যান্ত পাৰ্ব্বত্য রেলপথের ন্যায় সুড়ঙ্গমধ্যে ধোয়ার জন্য কষ্ট পাইতে হয় না এবং হিমালয়ের অপূর্ব ও পরিবর্তনশীল শোভা উপভোগ করিবার কোন বাধা হয় না। এই রেলপথের খেলাঘরের ন্যায় ছোট ছোট গাড়ী ও ইঞ্জিন দেখিয়া অনেকেই আশ্চৰ্য্য হন কেমন করিয়া ইহারা হিমালয়ের উচ্চ শিখরে উঠবে। গাড়ী চলিতে আরম্ভ করিলে সে বিস্ময় আর থাকে না। ক্ষুদ্র ট্রেণ আঁকিয়া বাকিয়া পাহাড়ের গা দিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া নানা কৌশলে ক্রমে উপরে উঠতে থাকে। এই পাৰ্ব্বত্য রেলপথের ইঞ্জিনীয়রকে ইহার জন্য বহু আয়াস স্বীকার করিতে হইয়াছে। এই কারণে দাৰ্জিলিং যাইতে এই রেলপথে ভ্রমণ বিশেষ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা। দজ্জিলিংএর পথে-শিলিগুড়ি স্টেশন ছাড়িয়াই পূৰ্ব্বদিকে তিস্তা উপত্যক শাখা লাইন ফেলিয়া মহানদী সেতু পার হইয়া ৪ মাইল দূরবর্তী পঞ্চনই জংশন পড়িবে। এই জংশন হইতে কিষণগঞ্জ শাখা বহির্গত হইয়াছে। পঞ্চনইএর পাশ্ববর্তী গ্রাম চাদমণিতে চৈত্রমাসে দোলপূর্ণিমার সময় রাজবংশীদের বসন্ত উৎসব ও কামদেবের পূজা নৃত্যগীতাদি সহযোগে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। কিষণগঞ্জ শাখাপথের বাঘডোগরা হাতিঘিষা ও নফসল বাড়ী স্টেশন শিলিগুড়ি হইতে যথাক্রমে ১০, ১৪ ও ১৮ মাইল দূরে তরাইএর জঙ্গলমধ্যে অবস্থিত। পূর্বে এখানে বাঘের অত্যন্ত উবদ্রব ছিল বলিয়া বাঘডোগর নাম হইয়াছে, হাতীর অত্যাচারের জন্য হাতিঘিসা ও নকসল অর্থে তিববতীয় ভাষায় শিকারের উপযোগী স্থান বলিয়া নাম হইয়াছে নকসল বাড়ী । ইহাদের পরের স্টেশন বাতাসী ও অধিকারী দাৰ্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় অবস্থিত। তাহার পর পূর্ণিয়া জেলার কিষণগঞ্জ মহকুমা আরম্ভ হইয়াছে। শেষোক্ত মহকুমায় এই শাখা লাইনে ইসলামপুর থানা ও ঠাকুরগঞ্জ প্রধান স্টেশন। ইসলামপুরে এ অঞ্চলের বড় হাট। ঠাকুরগঞ্জের একটি ধ্বংসাবশেষ বিরাট রাজার বাড়ী ছিল বলিয়া কথিত । কয়েক বৎসর পূর্বে ত্রিকোণমিতিক মাপের সময় এখানে ক্ষোদিত লিপিযুক্ত কতকগুলি প্রস্তরখণ্ড পাওয়া গিয়াছিল। ঠাকুরগঞ্জ, শিলিগুড়ি ও কিষণগঞ্জ ইষ্টতে যথাক্রমে ৩৮ ও ৩২ মাইল । . - কিষণগঞ্জ শাখা ছাড়িয়া দিয়া দার্জিলিং অভিমুখে পঞ্চনই জংশনের পরের স্টেশন শিলিগুড়ি হইতে ৭ মাইল দূরবর্তী সুকনা। এই পৰ্য্যন্ত রেলপথ প্রায় সমতল ভূমি দিয়া আসিয়াছে। পঞ্চনই ও মুকুনার মধ্যে রেলপথের উভয়দিকে চা-বাগান দেখিতে পাওয়া যায়। মুক্না হইতে তরাইএর জঙ্গল এবং পাহাড়ের চড়াই আরম্ভ হইয়াছে। এখানকার পর হইতে বনানীর শোভা দেখিলে বিস্মিত ও মুগ্ধ হইতে হয়। যতদূর দেখা যায় কেবল তরুশ্রেণীর পর তরুশ্রেণী চলিয়াছে। বনবিহঙ্গের কুজন, পাহাড়িয়া নদীর কুলুকুলু রাগিনী ও ঝিল্লীরব শুনিতে শুনিতে কবির কথা মনে পড়িয়া যায়, “ঝিল্লীমুখরিত বনপরিপূরিত কলয়তি মহানদী মৃতুলপ্রপাতে।” ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়া রেলপথ বিশাল হিমালয়ের সিঙ্গলীলা পৰ্ব্বতশ্রেণীর একটি বাহু বাহিয়া ক্রমেই উপরে উঠতেছে।