পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার সাধারণ পরিচয় --- কোণ দিয়া বাংলা দেশে প্রবিষ্ট হইয়াছে। এই নদ রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার টুপূর্ব প্রান্ত এবং ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার কিয়দংশের পশ্চিম প্রান্ত দিয়া প্রবাহিত। বগুড়া জেলার মধ্যদিয়া ব্ৰহ্মপুত্র নদের যে অংশ প্রবাহিত উহা স্থানীয় অধিবাসিগণের নিকট “দাওকোবা” নামে পরিচিত। পাবনা জেলার সীমান্তে ব্ৰহ্মপুত্র নদ পুরাতন ঠুখাত ত্যাগ করিয়া এক নূতন খাত দিয়া প্রবাহিত হইতেছে। এই খাতের নাম যমুনা বা ঠুনুতন ব্রহ্মপুত্র। এই নূতন প্রবাহ গোয়ালন্দের নিকট পদ্মার সহিত মিশিয়াছে এবং পুরাতন প্রবাহ ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়া আসিয়া ভৈরববাজারের নিকট মেঘনার সহিত মিলিত হইয়াছে। যমুনার উপনদী সমূহের মধ্যে তিস্তা (ত্রিস্রোতা), করতোয় ও আত্রাই (আত্ৰেয়ী) উল্লেখযোগ্য। ব্রহ্মপুত্র নদ বহুবার খাত পরিত্যাগ করায় এবং সেই সকল খাত উৰ্ব্বর পলিমাটির দ্বারা পূর্ণ হওয়ায় পূর্ববঙ্গ বিশেষ শস্য সমৃদ্ধ হইয়াছে। তিস্রোতা বা তিস্তা নদী বহুবার গতি পরিবর্তন করিয়াছে। ইহার পুরাতন খাতগুলি স্থান বিশেষে ছোট তিস্তা, বুড়ী তিস্তা ও মরা তিস্তা নামে পরিচিত। বর্ষাকাল ভিন্ন অন্য সময়ে এই সকল খাতে নৌকা চলাচল করিতে পারে না। ১৭৮৭ খৃষ্টাব্দের ভীষণ জল প্লাবনের ফলে তিস্তা ও আত্রাই নদীর গতি সম্পূর্ণ পরিবত্তিত হইয়া যায় এবং পূর্বে যে স্থান দিয়া নদী প্রবাহিত ছিল তাহার চিহ্ন পর্যন্ত একরূপ লোপ পাইয়া যায়। 葱 মেঘনা—সুরমা ও বরাক নামে পরিচিত শ্রীহট্ট ও কাছাড় জেলার দুইটি নদীর মিলিত স্রোত ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইয়া ভৈরববাজারের নিকট পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সহিত মিলিত হইয়া মেঘনা নাম ধারণ করিয়াছে এবং ত্রিপুরা ও নোয়াখালি জেলার প্রান্তদিয়া বঙ্গোপসাগরে গিয়া পড়িয়াছে। মেঘনার উপনদী সমূহের | মধ্যে শীতলাক্ষী, বুড়ীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, তিতাস ও ডাকাতিয়া নদীর নাম উল্লেখযোগ্য। গঙ্গ, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এই তিনটি নদীকে বাংলা দেশের প্রাণ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। হিমালয় পৰ্ব্বত হইতে পলিমাটি বহন করিয়া আনিয়া ইহারা সমগ্র বঙ্গদেশকে ঋদ্ধিমান করিয়া তুলিতেছে। বাংলা দেশ যে “মুজলা, সুফলা ও শস্যশ্বামলা” সে শুধু এই নদীত্রয়ের জন্য। অন্যান্য নদনদী—পূর্বে যে সকল নদনদীর নাম উল্লেখ করা হইয়াছে তাহ ছাড়া বাংলাদেশে ছোট বড় আরও প্রায় শতাধিক নদনদী আছে। তাহাদের মধ্যে বৰ্দ্ধমান বিভাগে দারুকেশ্বর, বরাকর, ময়ূরাক্ষী, কাসাই, শিলাই ও বর্ণরেখা প্রেসিডেন্সি ষ্ট্র বিভাগে বিদ্যাধরী, পিয়ালী, ইছামতী, রূপসা, রায়মঙ্গল, কপোতাক্ষ, মালঞ্চ, কুমার, নবগঙ্গা ও চিত্র ; রাজশাহী বিভাগে বড়াল, টাঙ্গন, কালিন্দী, পুনর্ভবা, কুলিক, কাঞ্চন, ধরলা ও মহানদী ; ঢাকা বিভাগে কীৰ্ত্তনখোলা, বলেশ্বর, ঝিনাই ও মগরা, এবং চট্টগ্রাম বিভাগে কর্ণফুলি, শঙ্খ, মাতামুড়ী, ফেণী, ও গোমতী উল্লেখযোগ্য নদনদী।