পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলা দেশ అa আরম্ভ হয় ১৮৬১-৬২ খৃষ্টাব্দে। প্রথমে সিঞ্চল পাহাড়ের শীর্ষ দেশে চারা লাগানো হয় । কন্তু, অতিরিক্ত ঠাণ্ডার জন্য অচিরেই সাময়িক ভাবে লেবংএ নামাইয়া আনা হয় এবং শেষে দার্জিলিং হইতে ১২ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে রংবীতে স্থায়ীভাবে চাষ আরম্ভ হয় । সিনকোন চাষ অত্যন্ত যত্নসাপেক্ষ। মংপুতে সিনকোন গাছের শুকনা ছাল রাখিবার জন্য প্রকাণ্ড প্রকাও গুদাম আছে ; সকল আবাদগুলি হইতে ছাল আনিয়া মংপুর কারখানায় কুইনাইন প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে ছালগুলি মিতি করিয়া গুড়া করিয়া অতি সূক্ষ্ম রেশমের ছাকমী দিয়া ছাকিয়া কষ্টিক সোডা ও জলের সহিত মিশাইয় আলোড়ন করা হয় ; ইহাতে ছাল হইতে কুইনাইন বাহির হইয়া আসে। ইহার পর ইহাতে তেল ঢালিয়া নাড়িতে থাকিলে কুইনাইন তেলের মধ্যে চলিয়া আসে এবং গুলিয়৷ যায় এবং নীচে জলের মধ্যে ছালের অবশিষ্ট অংশ পড়িয়া থাকে। উপরের তেল ঢালিয়া লইয়া সারি সারি চৌবাচ্চার মধ্যে রাখিয়া সালফিউরিক এসিড় মিশ্রিত করা হয় ; ইহাতে কুইনাইন সালফেটু তৈয়ারী হয় এবং তেল হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া নীচে পড়িয়া যায় ; উপর হইতে তেলটুকু পুনর্ব্যবহারের জন্য পৃথক করিয়া লওয়া হয়। এসিড-পূর্ণ নীচের অংশটি অপর একটি পাত্রে লইয়া গিয়া কসটিক সোডা দিয়া অতিরিক্ত এসিডের ভাগ দূর করা হয় ; তখন কুইনাইন সালফেটু দানা বাধিয়া উঠে ; দানাগুলি ছাকিয়া লইয়া গরমজলে পুনরায় গুলিয়া অপর এক প্রক্রিয়া দ্বারা ইহা হইতে রং প্রভৃতি দূর করিয়া পরিষ্কার করিয়া লওয়া হয়। কুইনাইন সালফেট মিশ্রিত জল ছাকিয়া ঠাণ্ডা করিতে দিলে পুনরায় দানা বাহির হইয় আসে। সেনটি ফিউগাল যন্ত্রের সাহায্যে দানাগুলি হইতে শেষ বিন্দু জল বাহির করিয়া লইয়া একটি উষ্ণ কক্ষে এগুলি শুকাইয়া কাগজের মোড়ক করিয়া বিক্রয়ার্থ প্রেরিত হয়। ১৬৩৮ খৃষ্টাব্দে পেরুর তদানীন্তন স্পেনীয় রাজ প্রতিনিধির পত্নী কাউনটেস চিনচিন (Chinchon) সিনকোন ছাল ব্যবহার করিয়া জ্বর হইতে আরোগ্য লাভ করেন। র্তাহার নাম হইতেই সিনকোন নামের উৎপত্তি, নহিলে প্রথমে ইহা “ পেরুভিয়ন বার্ক” বা পেরুদেশীয় ছাল নামে পরিচিত ছিল। কুইনাইন কথার উৎপত্তি পেরুর ইণ্ডিয়ানদিগের ভাষার শব্দ “ কিনা” হইতে ; কিনা অর্থে গাছের ছাল বুঝায়। এবার পুনরায় রেলপথে ফিরিয়া রিয়াং স্টেশন হইতে কালিম্পংএর দিকে অগ্রসর হওয়া যাক। রিয়াং স্টেশনের কাছে এবং স্টেশন ছাড়িবার অব্যবহিত পরেই নদীর দৃপ্ত অপূৰ্ব্ব মনোরম হইয়া উঠে। তিস্তা আঁকিয়া বাকিয়া দ্রুতগতিতে বহিয়া চলিয়াছে, নদীর বঁাকে বঁাকে শুভ্র বালুকারাশি ও চকচকে পাথর ও মুড়ির স্তৃপ এবং চারিদিকে সুউচ্চ পৰ্ব্বতশ্রেণী। সবগুলি মিলিয়া নিখুত একটি দৃশ্যপট রচনা করিয়াছে। ইহার মধ্য দিয়া রেলপথ চলিয়াছে, কখনও প্রায় ১০০ ফুট নীচে প্রবাহিত তিস্তার একেবারে উপরে আসিয়া পড়িয়াছে, কখনও বা একটু দূরে সরিয়া গিয়াছে। দৃশু গুলি ক্রমেই সুন্দর হইতে সুন্দরতর হইয় উঠতেছে। ইহার পর এই শাখাপথের শেষ স্টেশন শিলিগুড়ি হইতে ৩০ মাইল দূরবর্তী গিয়েলখোলা আসিবে । গিয়েলখোলা হইতে ২ মাইল উত্তরে তিস্তার উপর ঝুলান সাকে । সঁাকোটি দখিতে সুন্দর এবং নদীর অনেক উপরে নিৰ্ম্মিত ; প্রায় ১০০ ফুট নীচে প্রচণ্ডবেগে তিস্ত হিয়া চলিয়াছে। এখানে তিনটি প্রধান রাস্ত মিলিয়াছে ; শিলিগুড়ি থেকে রেলপথের