পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার সাধারণ পরিচয় বাংলার ফলের মধ্যে নারিকেল প্রথম স্থান অধিকার করে । আম, জাম, লিচু, পেয়ার, পেঁপে, কল, বাতাবী লেবু, আনারস, কাঠাল প্রভৃতিও বাংলা দেশে প্রচুর পরিমাণে জন্মিয়া থাকে। খনিজ দ্রব্য-বাংলার খনিজ দ্রব্যের মধ্যে কয়লাই সৰ্ব্ব প্রধান। বৰ্দ্ধমান জেলার আসানসোল ও রাণীগঞ্জ প্রভৃতি স্থান কয়লার খনির জন্য বিখ্যাত। বীরভূম ও বাকুড়া জেলার কোন কোন অংশেও কয়লার খনি আছে। তাহ ছাড়া বাকুড়া জেলার রাণীর্বাধ ও রাষ্টপুর থানার এলাকায় অভ্র ও অল্প পরিমাণে তাম্র পাওয়া যায়। বাঁকুড়া বৰ্দ্ধমান ও বীরভূম জেলার পাহাড় অঞ্চলে লৌহ, প্ৰস্তর ও ঘুটিং যথেষ্ট পরিমাণে মিলে । কৃষিজাত দ্রব্য-বাংলা কৃষিপ্রধান দেশ। এই দেশের অধিবাসিগণের প্রতি চারিজন লোকের মধ্যে তিনজন কৃষি কার্য্যের দ্বারা জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করে । গঙ্গা ও ব্ৰহ্মপুত্রের দ্বারা আনিত পলিমাটির দ্বারা বাংলাদেশের ভূমি সকল বিশেষ উর্বরতা পাপ্ত হয়,এবং ঐ সকল ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে শস্যাদি জন্মে। বাংলার কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে ধান ও পাট সৰ্ব্ব প্রধান । ধান বাংলার প্রায় সকল জেলাতেই জন্মে। পলি-পড়া সরস ভূমি ও গরম বাতাস পাট চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। ত্রিপুরা, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, পাবনা ও রংপুর জেলার আবহাওয়া অনেকট এইরূপ হওয়ার দরুণ ঐ সকল জেলাতে বিস্তর পাট জন্মে। পৃথিবীর সকল দেশের পাটের চাহিদা একমাত্র বাংলা দেশষ্ট মিটায়। বাংলা ছাড়া অন্য কোথাও পাটের চাষ হয় না বলিলেই চলে। বাংলাদেশ হইতে প্ৰতি বৎসর কোটী কোটী টাকার পাট বিদেশে চালান যায় । ধান ও পাট ছাড়া বাংলা দেশে প্রচুর পরিমাণে ইক্ষু, তিল, তিসি, তামাক, সরিষা ও নানাবিধ ডাইল, কাপাস ও চা জন্মে। নিত্য ব্যবহার্য শাক সঙ্গীর মধ্যে আলু, পালং, পটল, বেগুন, মূলা, ঢেড়স, টমাটো, লাউ, কুমড়া, উচ্ছে, কপি, থোড়-মোচা প্রভৃতি প্রধান । শিল্পজাত দ্রব্য—কুটার শিল্পের জন্য অতি প্ৰাচীন কাল হইতেই বাংলার খ্যাতি আছে । বয়ন-শিল্প এক সময়ে এ দেশে উৎকর্ষের চরম সীমায় উপনীত হইয়াছিল। ঢাকার মসলিন সুদূর রোমসাম্রাজ্যে পৰ্য্যন্ত সমাদৃত হইত। বর্তমানেও ঢাকা, চন্দননগর, শান্তিপুর ও টাঙ্গাইল প্ৰভৃতি স্থান সূক্ষ্ম কার্পাস বস্ত্রের জন্য, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বাঁকুড়া ও বীরভূম রেশমী বস্ত্রের জন্য এবং ফরিদপুর, কুমিল্লা ও নোয়াখালি মোটা তাতের কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। শাখার ও সোনারূপার সূক্ষ্ম কাজের জন্য ঢাকা ও মৃৎ শিল্পের জন্য কৃষ্ণনগরের খ্যাতি আজিও অক্ষুন্ন আছে। মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বৰ্দ্ধমান, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও ময়মনসিংহের পিতল ও কাসার বাসন বিখ্যাত। আজকাল বাংলাদেশে বহু কাপড়ের কল, দেশলাইএর কল, চিনির কল, কাগজের কল, চীনামাটি, এলুমিনিয়াম ও কাচের কারখানা এবং সাবান ও গন্ধ দ্রব্যাদি প্রস্তুতের কারখানা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।