পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>brや বাংলায় ভ্রমণ \ কৃলেতে উঠিলে বাঘে লৈয়া সে পলায়। জলেতে পড়িলে সে কুম্ভীরে ধরি খায় ॥ নিরস্তুর এ পানিতে ডাকাইত ফিরে । পাইলেই ধন প্রাণ দুই নাশ করে। এতেকে যাবৎ না উড়িয়া দেশ পাই । তাবৎ নীরব হও সকল গোসাই ৷ ” মথুরাপুর রোড স্টেশন হইতে প্রায় ছয় মাইল পশ্চিম দিকে মন্দিরবাজার নামক গ্রামে স্ত্রীকেশবেশ্বরের মন্দির নামে একটি প্রায় আড়াই শত বৎসরের পুরাতন শিবমন্দির আছে। স্টেশন হইতে এই গ্রাম পৰ্য্যন্ত র্কাচ রাস্ত আছে। এই রাস্তার পাশ্ব দিয়া একটি খাল বরাবর মন্দিরবাজার পর্য্যন্ত গিয়াছে। এই রাস্ত ধরিয়া প্রায় পাচ মাইল পথ গেলে জগদীশপুর গ্রাম। এই গ্রামের উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ের নিকটে হাউড়ির হাট নামক স্থানে দুইটি পুরাতন ভগ্নপ্রায় শিবমন্দির দেখিতে পাওয়া যায়। প্রায় তিন শত বৎসর পূৰ্ব্বে হাউড়ি নামক জনৈক মহিলার দ্বারা এই হাট ও মন্দির দুইটি স্থাপিত হয়। লাল রঙের লম্বা অথচ হালকা ইটের দ্বারা এই মন্দির দুইটি নিৰ্ম্মিত। এই মন্দিরদ্বয়ের মধ্যে পদ্মখচিত কৃষ্ণ প্রস্তরের আসনের উপর প্রায় আড়াই হাত উচ্চ কৃষ্ণ প্রস্তর নিৰ্ম্মিত শিবলিঙ্গ স্থাপিত আছে । জগদীশপুর ছাড়িয়া অৰ্দ্ধ মাইলের কিছু অধিক দূর অগ্রসর হইলে শ্ৰীকেশবেশ্বরের মন্দিরে পৌছানো যায়। এই মন্দিরটি বেশ বড় ও উচ্চ। মন্দির হইতেই গ্রামের নাম মন্দিরবাজার হইয়াছে। বাজারের মধ্যেই এই মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরের চূড়ার দুইটি থাক। উপরের থাকে তিনটি ত্রিশূলযুক্ত কলস বসানো আছে। বহুদিন ধরিয়া এই মন্দিরের সংস্কার না হওয়ায় ইহার চূড়ার চতুৰ্দ্দিকে কতকগুলি আগাছ জন্মিয়াছে। মন্দিরটির তিন দিকে প্রশস্ত বারান্দা ও রোয়াক আছে। প্রধান গম্বুজটি বারান্দা গুলিকে আবৃত করিয়া নিৰ্ম্মিত। মন্দিরের মেঝে শ্বেতপ্রস্তরে মণ্ডিত, বারান্দায়ও অনেকগুলি নাম লেখা শ্বেতপাথর বসানো আছে। মন্দিরস্থিত শিবলিঙ্গের নিত্যসেবার বন্দোবস্ত আছে। মন্দিরের বাহিরের দেওয়ালে কতকগুলি কারুকার্যা খচিত ইষ্টক আছে এবং দুই পাশ্বে দুইখানি টালিতে পলতোলা অক্ষরে নিম্নলিখিত লিপিট উৎকীর্ণ আছে— - “আকাশান্ধি রসঃ ক্ষেীণীমিতে শাকে শিবালয়ং । ভূপঃ শ্ৰীকেশবোকাষীদ্বাস্থদেবেন শিল্পিনা ।” অর্থাৎ ১৬৭০ শকাব্দে শ্ৰীকেশব নামক রাজা বাস্থদেব নামক শিল্লির দ্বারা এই শিবমন্দির নিৰ্ম্মাণ করাইলেন। বর্তমানে ১৮৬১ শকাব্দ চলিতেছে । সুতরাং এই মন্দির দুই শত বৎসরেরও অধিক পুরাতন । দুই শত বৎসর পূৰ্ব্বে সুন্দরবন অঞ্চলে কেশব নামে কোন রাজা ছিলেন কিনা তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । স্থানীয় প্রবাদ অনুসারে ইহার নাম ছিল কেশব রায়-চৌধুরী এবং ইনি নাকি একজন ভূইয়া রাজা ছিলেন। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পাইয়া তিনি অরণ্য মধ্যে এই শিবলিঙ্গকে আবিষ্কার করেন এবং স্বীয় নামে তাহার প্রতিষ্ঠা করেন। চৈত্র-সংক্রান্তির সময় কেশবেশ্বরের মন্দির প্রাঙ্গনে মহাসমারোহ হয় ।