পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ > ఫి(t fহারগুলির চিহ্ন আজ আর বিশেষ নাই। কেহ কেহ মনে করেন এগুলি সুন্দরবনের মদম মাটিতে ভূগর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে। সাগরদ্বীপের নিকটবৰ্ত্ত কয়েকটি স্থানে এবং খুলনা জেলার স্থানে স্থানে বৌদ্ধযুগের কিছু কিছু চিহ্ন বৰ্ত্তমান বলিয়া অনুমিত হয়। (লক্ষ্মীকান্তপুর, গঙ্গাসাগর ও ভরত ভায়না দ্রষ্টব্য)। যুয়ান চোয়াংএর সমতট দেশে বাসকালে তথাকার রাজপুত্র প্রসিদ্ধ নালন্দা মহাবিহারের মহাস্থবির হইয়াছিলেন। ইনিই সুবিখ্যাত পণ্ডিত শীলভদ্র । মুসলমান আমলে সুন্দরবন ও নিকটবৰ্ত্তী অঞ্চল ভাটপ্রদেশ নামে খ্যাত ছিল। অনেকের মতে মুন্দরবনে পূৰ্ব্বে নানাস্থানে মানুষের বসতি ছিল এবং অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর নগরী ছিল ; মগ ও পর্তুগীজগণের অত্যাচারে এই সকল লোকালয় উঠিয় যায় এবং সুন্দরবন ক্রমশঃ জনশূন্য হইয়া পড়ে ; ইহা ছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলের ভূমির সৰ্ব্বদা অবনমন হেতুও লোকালয়গুলি চিরস্থায়ী হয় নাই এবং এই কারণেই পুৰ্ব্ব বসতির চিহ্নগুলির অধিকাংশই আর দৃষ্টি গোচর হয় না। সুন্দরবনের মাটা খুড়িলে মাঝে মাঝে ভূগর্ভে পুরাতন পুষ্করিণী, মন্দির এবং অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয় ; তাহ ছাড়া কখনও কখনও বৃক্ষশ্রেণী খাড়া দাড়াইয়া আছে দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা হইতে ভূমির অবনমনের স্পষ্ট প্রমাণ মিলে। এই জন্য কেহ কেহ অনুমান করেন, পূৰ্ব্বকালে হঠাৎ অবনমনের ফলে সুন্দরবন জনহীন হইয়া যায়। অপর মতে সুন্দরবনে কখনও বিস্তৃত ভাবে মানুষের বসতি হয় নাই, মধ্যে মধ্যে তু একজন সাহসী ব্যক্তি এখানে ওখানে আবাদ করিবার চেষ্টা করিয়া বিফল হইয়াছেন মাত্র। সুন্দরবনের জমির অবনমনের ও পুনরুত্থানের কারণ অনেকের মতে এইরূপ -- বঙ্গোপসাগরের পর রায়মঙ্গল ও মালঞ্চ মোহনার দক্ষিণে চব্বিশ পরগণা এবং খুলনা জেলার কতকাংশের ঠিক নীচেই সমুদ্রের গভীরতা ৫০/৬০ ফুট হইতে হঠাৎ সমুদ্রতর হইতে ১৫ মাইল দূরে একেবারে ১৭০০৷১৮০০ ফুটে পৌঁছিয়াছে। সমুদ্রের এই গভীর অংশকে Swatch of no ground বা অতলতল বলে। ফাগুসন সাহেবের মতে বঙ্গোপসাগরে পতিত নদীগুলি হইতে পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম দিকে স্রোত বহিয়া সংঘাতের ফলে ঘুণীর উৎপত্তি হয়, সেজন্য মাটি সেখানে থিতাইয়া জমিতে পারেন এবং ইহা হইতেই অতলতলের উৎপত্তি । ইহা লক্ষ্য করিবার বিষয় যে বঙ্গোপসাগরে মিলিবার সময় নদীগুলি অনেকটা হয় পূৰ্ব্বদিকে, নয় পশ্চিমদিকে বহিয়া অতলতলের মুখে ধাবিত হয়; এইজন্য সুন্দরবনের দক্ষিণে নদীর মোহানার চরগুলির অগ্রভাগ অতলতলের দিকে মুখ করিয়া আছে । পূৰ্ব্বদিকের চর পশ্চিমমুখী এবং পশ্চিমদিকের চর পূর্বমুখী। কাহারও কাহারও মতে শাবার ভূমিকম্প বা অকস্মাৎ অবনমনের ফলে এই অতলতলের উৎপত্তি। যাহা উক, সুন্দরবনের ভূমধ্য হইতে অল্প অল্প করিয়া কাদামাটা চুইয়া অনবরত দক্ষিণমুখী উলধারার সহিত অতলতলের দিকে চলিতেছে। ভূমধ্যস্থ মৃত্তিকা এইরূপে বাহির হইয়া যাওয়ায় উপরস্থ অরণ্যময় মৃত্তিকাস্তরের ভারে স্থানে স্থানে জমি বসিয়া যায় এবং জলমগ্ন হইয়া যায়। পলিমাটি জমিয়া আবার এই সকল স্থান ভরিয়া উচ্চ হইয়া উঠে।