পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२० 8 বাংলায় ভ্রমণ লাউজানি–ঝিকরগাছার পূৰ্ব্বোত্তর কোণে অবস্থিত লাউজানি একটি প্রাচী স্থান। অনেকে অনুমান করেন যে এই স্থানের পূর্বনাম ব্রাহ্মণ নগর এবং এখানে রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী ছিল। এই স্থানটি কপোতাক্ষ নদের পূর্ব তীরে অবস্থিত এবং পূৰ্ব্বে ইহার দক্ষিণ দিক দিয়া হরিহর নদ প্রবাহিত হইত। মাধবাচার্য্য ও কৃষ্ণরাম দাসের “রায় মঙ্গল” কাব্য এবং “কালুগাজী ও চম্পাবতী" নামক পুথি হইতে জানা যায় যে মুসলমান গাথা-সাহিত্যের অন্যতম নায়ক বিরাট নগরের অধিপতি সিকন্দর শাহের পুত্র গাজী সুন্দর বনের ব্যান্ত্রের সাহায্যে ব্রাহ্মণ নগর অধিকার করিয়া মুকুট রায়ের সুন্দরী কন্যা চম্পাবতীকে বিবাহ করেন। মুকুট রায়ের সেনাপতি মহাবীর দক্ষিণরায় গাজীর গতিরোধ করিবার জন্য প্রবল যুদ্ধ করেন, কিন্তু অবশেষে পরাজিত হইয়া সুন্দর বন অভিমুখে পলায়ন করেন এবং পরে গাজীর সহিত সন্ধি সূত্রে আবদ্ধ হইয় সুন্দর বনের একাংশের আধিপত্য লাভ করেন। দক্ষিণরায় পরে বনদেবতার পদে উন্নীত হন এবং নানা স্থানে তাহার পূজার প্রবর্তন হয় (“ধপধপি” স্টেশন দ্রষ্টব্য)। বিরাটনগর কোথায় তাহা নিণীত হয় নাই। গাথা সাহিত্যে গাজী সিকন্দর শাহের পুত্ররূপে বর্ণিত হইলেও কেহ কেহ অনুমান করেন যে তিনি সপ্তগ্রাম বিজয়ী জাফর খার পুত্র (পূর্ব ভারত রেলপথের “আদি সপ্তগ্রাম” স্টেশন দ্রষ্টব্য) এবং ইহার প্রকৃত নাম বরখান গাজী। গাথা সাহিত্যের নানা স্থানে ইনি বড় খা গাজী নামে উল্লিখিত হইয়াছেন। ব্রাহ্মণ নগরের রাজা মুকুট রায়ের সাত পুত্র ছিল, এই সাত ভাইএর একমাত্র বোন ছিলেন চম্পাবতী। কেহ কেহ অনুমান করেন যে রূপ-কথায় উল্লিখিত “সাত ভাই চম্পা" ও এই চম্পাবতী অভিন্ন মুকুট রায় যুদ্ধে পরাজিত হইয়া সবংশে মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন এবং গাজীর সহিত চম্পাবতীর বিবাহ দেন। তাহার কনিষ্ঠ পুত্ৰ কামদেব পলাইয়া গিয়া গোবরডাঙ্গার নিকটবৰ্ত্তী চারঘাটে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কামদেব পরে মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন এবং পীর ঠাকুরবর নামে প্রসিদ্ধ হন। ইনি প্রতাপাদিত্যের সমসাময়িক। (গোবরডাঙ্গ দ্রষ্টব্য)। গাথা-সাহিত্যে গাজীকে অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। দেবদূত বা ফেরেস্তাগণ সৰ্ব্বদাই তাহার সহায়, গঙ্গা, মহাদেব ও চণ্ডী প্রভৃতি হিন্দুদেবদেবীগণ র্তাহার অনুকুল এবং এমন কি সুন্দরবনের বাঘ ও কুমীর পর্য্যন্ত তাহার আজ্ঞাবহ । আজিও হিন্দু মুসলমান নির্বিবশেষে বহু ব্যক্তি বিপদ হইতে উদ্ধার লাভের জন্য গাজীর নামে “সিরণি” মানত করেন এবং এখনও বাংলার কোন কোন অঞ্চলে “গাজীর গীত” বা গাজীর মাহাত্ম্য সূচক পালা সাজসজ্জা সহকারে অভিনীত হয়। ...সাগরদাড়ি—ঝিকরগাছাঘাট হইতে খুলনা জেলার অন্তর্গত কপিলমুনি নামক । প্রসিদ্ধ স্থান পৰ্য্যন্ত একটী দেশীয় কোম্পানির সটীমার যাতায়াত করে । এই স্টীমার পথে ঝিকরগাছাঘাট হইতে প্রায় ২০ মাইল দূরে অবস্থিত কপোতাক্ষী তীরবর্তী সাগরদাড়ি গ্রাম মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি। শিক্ষিত বাঙালীর নিকট মাইকেল মধুসূদনের পরিচয় অনাবশ্বক। বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দে প্রবর্তক হিসাবে ও “মেঘনাদবধ" কাব্যের কবিরূপে তাহার নাম চিরদিনই বাংল সাহিত্যে অমর হইয়া থাকিবে। স্বীয় জন্মপল্লীর প্রাস্তবাহিনী কপোতাক্ষী নদীকে তিনি