পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় ভ্রমণ ما ه چه শতাব্দী পর্য্যন্ত ইহা বাংলার একটি প্রধান নদী ও বাণিজ্য পথ ছিল। তখন গঙ্গা-—সরস্বতী, ভাগীরথী ও ভৈরব এই তিনটি প্রধান ধারায় বিভক্ত ছিল। প্রথমে সরস্বতী ও ভৈরবই ছিল প্রধান বাণিজ্য পথ। ক্রমে গঙ্গার পূর্বাভিমুখে সরিয়া যাইবার ফলে সরস্বতী মজিয়া আসে ও ভাগীরথী জলঙ্গী মাথাভাঙ্গ প্রভৃতি পর পর গঙ্গার প্রধান ধারা বহন করে ; এই পরিবর্তনের ফলে ভৈরব তুর্দশাগ্রস্ত হয়। বর্তমান শহরের অতি সন্নিকটে মুড়লী কসবা নামক স্থানে পুরাতন যশোহর অবস্থিত ছিল। মুড়লীতে গরীব শাহ ও বেহরাম শাহ নামক দুইজন মুসলমান সাধুর সমাধি আছে। ইহারা বাগেরহাটের সুপ্রসিদ্ধ পীর খান জাহান অলির চেলা ছিলেন। আধুনিক সময়ে মুড়লীতে একটি সুন্দর ইমামবাড়া নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। মহারাজ প্রতাপাদিত্যের রাজধানী যশোহর হইতে বর্তমান যশোহর সম্পূর্ণ পৃথক । প্রতাপাদিত্যের পতনের পর মুঘলেরা তাহার রাজ্যে যশোহর নামে একটি ফৌজদারি স্থাপন করেন এবং উহার সদর মুড়লী কসবায় স্থানান্তরিত করেন। যশোহর ফৌজদারির সদর শহর বলিয়া কালক্রমে মুড়লী কসবার নামই যশোহর হইয়া যায়। বর্তমান যশোহর হইতে ২১ মাইল দক্ষিণে মির্জানগরে মুঘল ফৌজদারদের একটি বাসভবন ছিল। তথায় ফৌজদারদের একটি ভগ্ন প্রাসাদ ও একটি মসজিদ আছে। প্রাসাদ হইতে প্রায় এক মাইল দূরে একটি তুর্গের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। উহার নিকটবর্তী মাঠে একটি পুরাতন কামান আছে । যশোহর শহরের সংলগ্ন চাচড়া গ্রামে একটি পুরাতন জমিদার বংশের বাস। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবেশ্বর রায় প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে মুঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহকে সাহায্য করিয়া চারিটি পরগণার জমিদারি পাইয়াছিলেন। র্তাহার বংশধর মনোহর রায় আওরঙ্গজেবের আমলে জমিদারি বিস্তর বাড়াইয়াছিলেন । ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে চাচড়ার জমিদারগণ যশোহরের রাজা বলিয়া পরিচিত ছিলেন। রাজবাটীর পরিখা ও প্রাচীন প্রাকারের চিহ্ন এখনও কিছু কিছু বিদ্যমান আছে । চাচড় গ্রামে দশ মহাবিদ্যার একটি মন্দির আছে। এই মন্দিরের কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী প্রভৃতি দশ মহাবিদ্যার সুন্দর দারুময়ী মূৰ্ত্তিগুলি এ অঞ্চলে বিশেষ প্রসিদ্ধ। যশোহরে চিরুণী, বোতাম প্রভৃতি নিৰ্ম্মাণের কতকগুলি ছোট ছোট কারখানা আছে। বারবাজার-- যশোহর হইতে দশ মাইল উত্তরে যশোহর-ঝিনাইদহ রাস্তার পাশ্বে অবস্থিত বারবাজার একটি প্রাচীন স্থান। এখানে প্রায় তিন চার মাইল ব্যাপী স্থানে বহু ভগ্নাবশেষ ও পুরাতন দীঘিকাদি দৃষ্ট হয়। কেহ কেহ অনুমান করেন, es elea orsfizos frfors ha efses (Periplus of the Erythrean Sea) পেরিপ্লাসে বণিত গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী এই স্থানেই অবস্থিত ছিল । (বারাসাতবসিরহাট রেলওয়ের দেগঙ্গা স্টেশন দ্রষ্টব্য) । খৃষ্ট পূর্ব প্রথম শতাব্দীতে মহাকবি ভাজিল র্তাহার “জর্জিকাস” নামক কাব্যে লিখিয়া গিয়াছেন যে তিনি জন্মভূমি মণ্টয়া নগরীতে ফিরিয়া একটি মৰ্ম্মর মন্দির স্থাপন করিয়া তাহার শীর্ষদেশে স্বর্ণ ও গজদন্তে গঙ্গারিডি দিগের বীরত্বের কথা খোদিত করিবেন । ইহা হইতে গঙ্গারিডিগণের শৌর্য্য বীৰ্য্যের কথা প্রতীয়মান হয়। এখানকার ভগ্ন স্তৃপগুলি প্রায় ১০১২ ফুট হইতে ১৫১৬ ফুট উচ্চ।